৮ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ এই উপলক্ষ্যে ডয়চে ভেলে থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনগুলো পড়ে পাঠকদের অনেকে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের পক্ষে বিপক্ষে নানা মত তুলে ধরেছেন ফেসবুক পাতায়৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আপনারা একদিনের জন্যে নারী নারী কইয়া পাগল কেন হবেন? ৩৬৫ দিনই নারীকে সম্মান দিতে হবে৷ আমরা মুসলিম, আমরা নারীকে সম্মান দিতে জানি৷'' আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এই মন্তব্য পাঠক এস তালুকদারের৷
অন্যদিকে নারী-পুরুষের সমান অধিকারে মোটেই বিশ্বাসী নন ফেসবুক বন্ধু আবদুল্লাহ নোমান৷ তিনি মনে করেন, নারী কখনো পুরুষদের সমান কাজ করতে পারবে না৷ কাজেই তাঁদের সমান অধিকার দেওয়া যাবে না৷
সুজায়েত তাজিম ইমনও অনেকটা এরকমই মনে করেন নারী অধিকার সম্পর্কে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নারীরা বোঝে না যে সব কিছুর সমান অধিকার হয় না৷ পুরুষের পক্ষে যেমন নারী হওয়া যায় না, ঠিক নারীর পক্ষে তেমন পুরুষ হওয়া যায় না৷ আর এই পার্থক্য সৃষ্টির শুরু থেকে৷''
দক্ষিণ এশিয়ায় সবার ওপরে বাংলাদেশ
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য সূচক’ বলছে, নারী-পুরুষের ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: AP
লিঙ্গ সমতা মাপা
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, ডাব্লিউইএফ ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য সূচক’ প্রকাশ করে আসছে৷ মূলত চারটি বিষয় – অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষায় অর্জন, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন – বিবেচনা করে এ সূচক প্রকাশ করা হয়৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে সবশেষ সূচকটি প্রকাশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/D. Reinhardt
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম
সবশেষ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫টি দেশের মধ্যে ৬৮ নম্বরে৷ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবস্থান এরও পরে৷ ভারত ১০৮-এ আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৪ নম্বরে৷ আরও জানতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
শীর্ষে স্বাস্থ্য খাত
যে চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সূচক প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে৷ ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে এই খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২২তম৷ ২০১৫ সালে সেটা ২৭ ধাপ এগিয়ে ৯৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
শিক্ষা
২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে শিক্ষা খাতের ব়্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে ১০৯ নম্বরে আছে বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখা গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব়্যাংকিং এক৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯ নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে দুই ধাপ এগিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান আট৷ সংসদে নারী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৭৬৷ আর মন্ত্রিসভায় নারী সদস্য সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ আছে ১২৬ নম্বরে৷
ছবি: DW/S. Kumar Day
যেখানে পিছিয়েছে
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গতবারের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৩০তম অবস্থানে এসেছে৷ শ্রমখাতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ বিবেচনায় বাংলাদেশে অবস্থান ৯৭, আর একই কাজে নারী-পুরুষের বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থান ১২৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
সমতা আসতে লাগবে ১১৮ বছর!
ডাব্লিউইএফ বলছে, বেতনের পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা পুরোপুরি আসবে ২১৩৩ সালে, অর্থাৎ ১১৮ বছর পর৷ অবশ্য ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে সংস্থাটি আরও আগেই এই সমতা আসতে পারে বলে জানিয়েছিল৷ কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় সমতা আসার সময়সীমাও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
7 ছবি1 | 7
যে কোনো কারণেই হোক ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আবুল হাসেম নারীদের ওপর বেশ বিরক্ত৷ তাঁর মতে, ‘‘আর কত ক্ষমতা? প্রতিটি পরিবারে পুরুষের চাপা কান্না কে দেখে! এই ক্ষমতাধর নারীদের কাছে দেশ, সমাজ, পরিবার, সন্তান, কিছুই তো আর নিরাপদ নয়!''
তবে আমাদের বন্ধু অর্জুন বৈদ্য নারী অধিকার এবং পরিস্থিতি পরিবর্তনে বিশ্বাসী৷ তিনি বিশ্বাস করেন যে, নারীরাই সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে৷ যার একটি সুন্দর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি এভাবে, ‘‘এই পরিস্থিতি পাল্টাতে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ কারণ আমি বিশ্বাস করি, একজন মা-ই পারে একটা সমাজ বদলে দিতে৷ একজন মা যদি তার সন্তানকে নারী বিদ্বেষী না করে মানুষ ভাবতে আর সমঅধিকার চিন্তা দিয়ে মানুষ করে, সে সমাজ পাল্টাতে বাধ্য৷ আমি এখনো দেখি, একজন মা তার মেয়েকে সাপোর্ট করে না, শাশুড়ি বউকে সাপোর্ট করে না৷ তাহলে তারা সাহস পাবে কার কাছ থেকে? তাছাড়া অনেক পুরুষও আছে যারা আজকের নারী অগ্রযাত্রায় ভুমিকা রেখেছে৷'’
নারী-পুরুষ সমান হলে তো আর আলাদাভাবে নারী দিবস পালিত হতো না৷ আর ঠিক একথাই বোঝাতে চেয়েছেন পাঠক মসুম চৌধুরী৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘নারীকে নারী হিসেবে না দেখে যতদিন না পর্যন্ত মানুষ হিসেবে দেখবো, ততদিন পর্যন্ত নারী দিবস পালন করে যেতে হবে !''
বন্ধু পিযুষ কুমার দাস তো আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে বলছেন, ‘‘জগতে যা কিছু সুন্দর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক করিয়াছে নর৷''
সন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক রাখার কিছু উপায়
বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান কি আরো কিছু আছে? এককথায় ‘না’৷ এ সম্পর্ক খারাপ হলে পরিবারে নানা জটিলতা আর অশান্তির সৃষ্টি হয়৷ সম্পর্ক সুন্দর রাখার কিছু সহজ উপায় থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Colourbox
মায়ের সাথে সম্পর্ক
ছোটবেলায় শিশুরা বেশিরভাগ সময় যে মায়ের সাথেই থাকে – এ কথা ঠিক৷ তাই বলে যে মায়ের সাথে পরেও সম্পর্ক ভালো থাকবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু! সব সময় সম্পর্ক ভালো এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য অবশ্যই সে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে আর সেটা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই৷ কিন্তু কিভাবে?
ছবি: Colourbox
সম্পর্ক তৈরি
দায়িত্ব পালন এক বিষয়, আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক সম্পূর্ণ অন্য একটা বিষয়৷ ছোটবেলা থেকেই শিশুর সাথে খেলাধুলা করুন, বই পড়ুন৷ শিশুর সাথে বসে টিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠান দেখুন৷ শিশুকে অন্য শিশুর সাথে মিশতে, খেলতে দিন৷ এতেই বোঝা যাবে আপনার শিশুর পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা আর না লাগার কথা৷ শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিন তবে ওর পছন্দই যেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব না পায়৷
ছবি: Stadt Stuttgart/Kraufmann/Hörner
বাবার দায়িত্ব
সময়ের দাবির কারণে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো দেখা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সন্তানরা বেশিরভাগই মায়ের সাথে যতটা সহজ, বাবার সাথে তেমনটা নয়৷ তাই বাবাও সন্তানের জন্য কিছুটা সময় বের করে সন্তানের সাথে থাকুন৷ জার্মানিতে অনেক বাবাকেই দেখা যায় ছুটির দিনে সন্তানকে নিয়ে পার্কে, মিউজিয়ামে বা অন্য কোথাও ঘুরতে যেতে৷ এর মাধ্যমে বাবার সাথে সন্তানের গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠতা৷
ছবি: colourbox/S. Darsa
সমান দায়িত্ব
সন্তানদের সাথে ভালো এবং মধুর সম্পর্ক গড়া মা-বাবার সমান দায়িত্ব তাই দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে সব বিষয়ে কথা বলুন৷ এতে ছেলে-মেয়েরা সহজ হয়ে ওদের দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যার কথা জানাতে দ্বিধা করবে না৷ শিশুদের ভয় দেখিয়ে কখনো কাছে আনা যায় না৷ওরা কোনো অপরাধ করলে তা নিয়ে সরসরি আলোচনা করতে হবে৷ ছোটবেলায় সন্তনকে ভয় দেখিয়ে কাজ হলেও, বড় বয়সে কিন্তু আর সে সম্পর্ক সুন্দর থাকে না৷ তাই সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে৷
ছবি: Getty Images/D. Silverman
সম্পর্কে দূরত্ব আনে প্রযুক্তির ব্যবহার
আজকাল প্রায়ই দেখা যায় একদিকে মা, একদিকে বাবা, আর অন্যদিকে সন্তান – যে যার মতো ব্যস্ত ফেসবুক, কম্পিউটার বা ট্যাবলেট নিয়ে৷ অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের ভেতর কথাবার্তা তেমন হচ্ছে না৷ তাই প্রয়োজন ছাড়া এই যন্ত্রগুলোকে সরিয়ে রেখে দিয়ে নিজেদের মধ্যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গুন্ডুলা গ্যোবেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tetra Images
সন্তানের সামনে ঝগড়া নয়!
বাবা-মায়ের নিয়মিত ঝগড়া সন্তানদের মনে ভীষণভাবে রেখাপাত করে, যা বড় বয়সেও তারা ভুলতে পারে না৷ শুধু তাই নয়, যারা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ এই তথ্য পাওয়া গেছে ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণার ফল থেকে৷ তাছাড়া বাবা-মা সারাক্ষণ ঝগড়া করলে সন্তানরা বিষণ্ণতায় ভোগে, যা পরবর্তিতে তাদের ভেতরে থেকে যায়৷
ছবি: Fotolia
আলোচনার বিকল্প নেই
পরিবারের সুখ-শান্তি রক্ষায় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই৷ তাই ‘‘শিশুকে শিশু না ভেবে একজন সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গণ্য করে আলোচনায় ওকেও অংশ নিতে নিন৷ শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং ওকে বলার সুযোগ দিন৷ এর মধ্য দিয়ে আপনার সন্তানটিও বুঝবে যে সে পরিবারের একজন সদস্য এবং ওর মতামতেরও মূল্য আছে৷ এতে শিশুর দায়িত্ববোধ এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে’’, বলেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture alliance/zb/Hans Wiedl
বকা বা ভয় দেখাবেন না!
আজকের যুগের জীবনযাত্রা মোটেই সহজ নয়, কিন্তু তারপরও মা-বাবা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না৷ কারণ শিশুদের মন খুবই নরম, ওরা সব বাবা-মায়ের সব কথার উত্তর না দিলেও তা ওদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ভেলে, খুব সহজেই৷ দৈনন্দিন সমস্যার কথাও সন্তানদের সাথে শেয়ার করুন৷ হয়ত ওদের কাছে থেকেই পেয়ে যাবেন সমস্যার সমাধান৷বকাঝকা করে বা ভয় দেখিয়ে সন্তানদের কাছে আনা যায় না৷
ছবি: Sandy Schulze/Fotolia
স্বপ্ন আর বাস্তব – এক নয়!
প্রতিটি বাবা-মা চান তাঁদের সন্তান সব কিছুতেই ভালো করুক, যা খুবই স্বাভাবিক৷ তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, ‘স্বপ্ন আর বাস্তব’ – এক নয়৷ তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হয়নি বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতায় মনের মতো সাফল্য দেখাতে পারেনি বলে তাকে বকাঝকা না করে বরং আরও একটু বেশি যত্ন নিন, সাহস দিন আগামীবারের জন্য৷ তাছাড়া পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, কখনোই!
সন্তান এবং বাবা-মায়ের ভেতর এমন সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে যেন, একে-অপরকে নির্দ্বিধায় সব কথা বলতে এবং বুঝতে পারা যায়৷
ছবি: Colourbox
10 ছবি1 | 10
ডয়চে ভেলের বহু পুরনো বন্ধু অসিত কুমার দাস মিন্টু আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে তাঁদের ক্লাবের পক্ষ থেকে ডয়চে ভেলের মাধ্যমে সকল নারীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের মঙ্গল কামনা করেছেনষ শুধু তাউ নয়, তারা যাতে পুরুষদের মতো সর্বক্ষেত্রে সকল সুযোগ-সুবিধা পায়, এমনটাই আশা করেছেন তিনি৷