৩৭০ বিলোপের পর প্রথম ভোট কাশ্মীরে
১৭ নভেম্বর ২০২০![](https://static.dw.com/image/55303606_800.webp)
জেলাস্তরের নির্বাচন। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে আগামী ২৮ নভেম্বরের এই নির্বাচন ঘিরেই তৈরি হয়েছে প্রবল কৌতূহল। কারণ, এটাই হবে মাস পনেরো আগে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম কোনো নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একদিকে আছে বিজেপি, অন্যদিকে বিরোধী জোট, যার মধ্যে ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স, মেহবুবা মুফতির পিডিপি এবং কাশ্মীরের অন্য দলগুলি আছে। কংগ্রেস তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। গুপকর জোটের ঘোষিত অবস্থান হলো, তারা ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরোধী।
এ বারের এই নির্বাচন শুধু যে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম নির্বাচন তাই নয়, আরো কিছু দিক থেকে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ৩৭০ ধারা বিলোপর পর কাশ্মীরের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিরা কেউ প্রায় এক বছর, কেউ তারও বেশি সময় ধরে বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা একজোট হয়েছেন। এই প্রথমবার হাত মিলিয়েছেন ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি। তাঁদের জোটে সিপিএমও আছে। তারা ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিরোধী। জেলার নির্বাচন হলেও সেই বিষয়গুলিই তাঁরা তুলবেন।
সম্প্রতি কাশ্মীর থেকে ঘুরে এসেছেন ডিডাব্লিউ উর্দুর সাংবাদিক সালাউদ্দিন। তাঁর বক্তব্য, ''এমনিতে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ ও দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা নিয়ে মানুষের মনে প্রচণ্ড রাগ রয়েছে। সেই ক্ষতে এখনো প্রলেপ পড়েনি। তবে গুপকর জোট লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই কারণে যে, তারা না লড়লে বিজেপি প্রার্থীরাই জিতে যেতেন। পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। বিরোধী দলগুলি বয়কট করায় বিজেপি প্রার্থীরাই সব আসনে জিতেছে। জেলার ক্ষেত্রে সেটা হতে দিতে চায়নি গুপকর।'' তাঁর মতে, ''কাশ্মীরে এমনিতে খুব কম ভোট পড়ে। দুই-তিন শতাংশের মতো। সেক্ষেত্রে গুপকর জোটের প্রার্থীদেরই জয়ের সম্ভাবনা প্রবল।''
দিল্লির সাংবাদিক ও অধিকাররক্ষা কর্মী আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, গুপকর লড়ছে বলেই জেলাস্তরের নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম নির্বাচনে কাশ্মীরিরা কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
গুপকরের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ছে কংগ্রেস। আর সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি প্রচার শুরু করেছে, কংগ্রেস জাতীয়তাবিরোধী। কারণ, গুপকর জোটের সঙ্গে হাত মেলানো মানেই জাতীয় স্বার্থের বিরোধিতা করা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গুলাম আহমেদ মির নিউজ ১৮কে বলেছেন, ''আমরা গুপকরের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছি। কিন্তু একই কর্মসূচির ভিত্তিতে লড়ব কি না, তাঁদের জোটে সামিল হয়ে লড়ব কি না, তা এখনো ঠিক হয়নি। হঠাতই ভোটের ঘোষণা হয়েছে। তাই সেই সময় পাওয়া যায়নি।'' প্রথম পর্যায়ের আসনগুলিতে কংগ্রেস নিজের প্রার্থী আলাদাভাবে জানিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের প্রার্থীর নাম গুপকরের হয়ে ফারুক আবদুল্লা ঘোষণা করেছেন। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থীদের নামও আছে। তবে বিজেপি-র প্রচারের পর কংগ্রেস গুপকরের সঙ্গে কীরকম সম্পর্ক রাখবে তা নিয়ে কিঞ্চিত দ্বিধায় ফারুক।
আর এই প্রথমবার কাশ্মীরে ভোট দিতে পারবেন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা। ১৯৪৭ সালে জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় এসেছিলেন এই হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তুরা। কিন্তু ৩৭৯-এর জন্য তাঁরা কখনো ভোট দিতে পারেননি। এ বার পারবেন। তাঁদের সংখ্যা এখন প্রায় চার লাখ।
এই সব কারণেই কাশ্মীর জেলা কাউন্সিলের ভোটও রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ। পুরো দেশের নজর সে দিকে থাকবে।