ভারতীয় দণ্ড-বিধির ৩৭৭ অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে আবারো পিটিশন দায়ের করেছেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কয়েকজন সেলিব্রেটি৷ ঐ অনুচ্ছেদে দু’টি পূর্ণবয়স্ক সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে সহমতের ভিত্তিতে হওয়া যৌন সম্পর্ককেও অপরাধ বলে ধার্য করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
ঋতু ডালমিয়া, আমন নাথ এবং নৃত্যশিল্পী এনএস জোহর-এর মতো তারকারা সমাকামীদের অধিকারের জন্য ৩৭৭ অনুচ্ছেদটি বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে বুধবার আবেদন করেছিলেন৷ গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর এ দিন প্রথম আদালত বসে৷ আবেদনে তাঁরা বলেছিলেন, এই দণ্ডবিধির কারণে তাঁদের অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে৷ এ আবেদনের উপর বৃহস্পতিবার শুনানি হবে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি৷
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ২০১৩ সালে দেওয়া রায়টি পুনর্বিবেচনা করতে সম্মত হন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ ২রা ফেব্রুয়ারি সমকামী নারী, পুরুষ, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের জন্য এটি সুখবর বয়ে আনে৷ ভারতীয় দণ্ড-বিধির ৩৭৭ অনুচ্ছেদকে বৈধ বলে দু'বছর আগের দেওয়া সর্বোচ্চ আদালতের রায়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ প্রসঙ্গত, ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ আমলে চালু হয় ঐ অনুচ্ছেদ৷
লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে জাতিসংঘে কাল একটি ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ তবে সেখানে ভারতের এই বিষয়টি প্রাধান্য পাবে কিনা – তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷
শীর্ষ আদালত বলেছিল, ৩৭৭ অনুচ্ছেদের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পিটিশনে সাংবিধানিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নানা ইস্যু তোলা হয়েছে৷ ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট ৩৭৭ অনুচ্ছেদ খারিজ করে সমকামিতা অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছিল৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে পিটিশন জমা পড়ে৷ এরপর ২০১৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর দিল্লি হাইকোর্টের ঐ রায় খারিজ করে অপর এক রায়ে ৩৭৭ অনুচ্ছেদের (অস্বাভাবিক যৌন অপরাধ) বৈধতা বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট৷ শুধু তাই নয়, সেই রায় খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে পেশ হওয়া একগুচ্ছ রিভিউ পিটিশনকেও ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এক নির্দেশের মাধ্যমে খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷ এর বিরুদ্ধেই কিউরেটিভ পিটিশন পেশ করে নাজ ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও এবং সমকামীদের অধিকার রক্ষা আন্দোলন কর্মীরা৷ তাঁরা জানায়, দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর বহু সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীরা তাঁদের যৌন পরিচিতি খোলাখুলি প্রকাশ করেন৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ অনুচ্ছেদ বৈধ বলে রায় দেওয়ায় তাঁরা আবারো বিপন্ন বোধ করছেন৷
এপিবি/ডিজি (টাইমস অফ ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, এপি)
সমকামিতা বৈধ এমন কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ
বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হলেও, তারা বৈষম্যের শিকার হন৷ ছবিঘরে থাকছে এমনই আটটি দেশের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্ক
১৮৫৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য সমকামিতাকে বৈধতা দেয়৷ এরপর তুরস্ক স্বাধীন হলে সেই আইন বলবৎ রাখে৷ তবে সে দেশের সংবিধানে সমকামীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে যেমন তেমনি সামাজিকভাবেও সমকামীদের এখনও বৈষম্যের শিকার হতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. O. Sandal
মালি
পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির সংবিধানে সমকামী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ তবে দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সমকামিতা পছন্দ করে না৷ তাই বৈধ হলেও মালির সমকামীরা বেশ ভালোই বৈষম্যের শিকার হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Saget
জর্ডান
১৯৫১ সালে দেশটিতে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হয়৷ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের তুলনায় সেখানকার সমকামীরা বেশ ভালোই আছে৷ সরকারও আইন করে সমকামীদের ‘অনার কিলিং’-এর হাত থেকে রক্ষা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস এই দেশটিতে৷ সেখানকার আইনে সমকামিতাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়নি৷ ২০০৩ সালে একবার সেরকম উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/A. Rudianto
আলবেনিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সমকামিতা বৈধ৷ এমনকি আইন করে সমকামীদের বৈষম্যের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: SWR/DW
বাহরাইন
১৯৭৬ সালে সেখানে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়৷ তবে দেশটিতে এখনও প্রকাশ্যে ছেলেরা মেয়েদের, কিংবা মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরতে পারে না৷
ছবি: Getty Images
ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর)
পশ্চিম তীরের জর্ডান অংশে ১৯৫১ সাল থেকে সমকামিতা বৈধ৷ তবে গাজাতে নয়৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, গাজায় যে আইনের কারণে সমকামিতা নিষিদ্ধ সেটা বলবৎ হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে৷
ছবি: Shadi Hatem
ইরাক
দেশটি সমকামিতাকে বৈধতা দিলেও বিষয়টি এখনও সেখানে ‘ট্যাবু’ হয়েই আছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Safin Hamed
8 ছবি1 | 8
আপনার পছন্দের তারকাদের মধ্যে যাঁরা সমকামী
একটা সময় ছিল যখন কেউ নিজের সমকামিতার বিষয়টি প্রকাশ করতে ইতস্তত করতো৷ কিন্তু সময় বদলেছে৷ একে একে অনেক তারকাই এখন পর্যন্ত নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
এল্টন জন
২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার পর ঐ বছরের ডিসেম্বরে নিজের ‘সিভিল পার্টনার’ চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড ফার্নিশকে বিয়ে করেন ‘ক্যান্ডেল ইন দ্য উইন্ড’ খ্যাত স্যার এল্টন জন৷ ১৯৭৬ সালে নিজেকে উভকামী (বাইসেক্সুয়াল) হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি৷ এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে সমকামী হিসেবে জীবনযাপন করছেন৷ সমলিঙ্গ বিয়ে ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে বেশ সোচ্চার এল্টন জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জোডি ফস্টার
১৯৭৬ সালে ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ ছবিতে শিশু পতিতা চরিত্রে অভিনয় করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী জোডি ফস্টার৷ তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করতে এক তরুণের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যার চেষ্টার কথাও অনেকেই জানেন৷ সেই ফস্টার ২০১৩ সালের গোল্ডেন গ্লোব অনুষ্ঠানে তাঁর সমকামী হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন৷
ছবি: Reuters
জর্জ মাইকেল
‘কেয়ারলেস হুইসপার’ – কে শোনেননি! ২০০৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে জর্জ মাইকেল বলেন, ‘‘আশির দশকে আমি অনেক মেয়ের সঙ্গে শুতাম, কিন্তু কখনও মনে হয়নি এটা কোনো সম্পর্কে গড়াতে পারে, কারণ আমি জানতাম, ইমোশনালি, আমি একজন সমকামী৷ আমি তাঁদের ‘কমিট’ করতে চাইতাম না, কিন্তু আমি তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম৷ তারপর আমার নিজের কাছেই নিজেকে লজ্জিত মনে হতে লাগলো, মনে হলো আমি মনে হয় তাঁদের ব্যবহার করছি৷’’
ছবি: Getty Images/Afp/Evert Elzinga
এলেন ডিজেনারেস
২০১৪ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে তোলা এই সেল্ফির কথা নিশ্চয় অনেকের মনে আছে৷ ছবিটি তুলেছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা এলেন ডিজেনারেস (সাদা পোশাক পরিহিত)৷ ১৯৯৭ সালে নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করেন জনপ্রিয় এই মার্কিন কমেডিয়ান, টেলিভিশন উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী৷ ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ হওয়ার পর ঐ বছরই এলেন বিয়ে করেন তাঁর সঙ্গী অভিনেত্রী ও মডেল পোর্শিয়া ডি রোসিকে৷
ছবি: picture alliance/AP Images/E. DeGeneres
রিকি মার্টিন
২০১০ সালে নিজের ওয়েবসাইটে ‘‘লিভিন’ লা ভিডা লোকা’’ গায়ক রিকি মার্টিন জানান, ‘‘আমি এটা বলতে গর্ববোধ করছি যে, আমি একজন সৌভাগ্যবান সমকামী৷’’ অবশ্য তার ১০ বছর আগে তিনি তাঁর এই পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছিলেন৷ পরবর্তীতে ‘ল্যারি কিং লাইভ’ অনুষ্ঠানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্বীকারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি আগে জানতাম যে নিজের পরিচয় প্রকাশের পর কতটা ভালো লাগে, তাহলে সেটা আমি আরও আগেই করতাম৷’’
ছবি: Getty Images
সিন্থিয়া নিক্সন
‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ খ্যাত অভিনেত্রী সিন্থিয়া নিক্সন ২০১০ সালে তাঁর সমকামী হওয়ার কথাটি সবাইকে জানান৷ অবশ্য তিনি প্রথমে ‘গে বাই চয়েস’, অর্থাৎ ‘ইচ্ছে করে সমকামী’ কথাটি বলে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন৷ পরে তিনি এর ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ‘‘আমি বিশ্বাস করি উভকামিতা বিষয়টি বাস্তবতা, এখানে বাছাবাছির সুযোগ নেই৷ তবে আমি সমকামী হওয়ার বিষয়টি ‘বেছে’ নিয়েছি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Foley
টিম কুক
জবসের পর এখন অ্যাপল সামলাচ্ছেন টিম কুক৷ ২০১৪ সালে লেখা এক প্রবন্ধে কুক সমকামী হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন৷ তিনি লিখেন, ‘‘সমকামী হয়ে আমি গর্বিত৷ আমি মনে করি, ঈশ্বর আমাকে যত সেরা উপহার দিয়েছেন তার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য একটি৷ আমার এই বক্তব্য (অ্যাপলের প্রধান একজন সমকামী) যদি অন্য কারও জন্য, যাঁরা সমকামী পরিচয় দিতে সাহস পাচ্ছেন না, অনুপ্রেরণার উৎস হয় তাহলে এই ব্যক্তিগত বিষয়টি প্রকাশ করাই যায়৷’’
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
ইয়ান থর্প
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পাঁচবার অলিম্পিক সোনা জেতা সাঁতারু ইয়ান থর্প ২০১৪ সালে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজের সমকামী হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়স যখন ১৬ ছিল তখন থেকেই গণমাধ্যম আমাকে আমার লিঙ্গের বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে৷ তখন আমি তাদের সত্য কথাটি বলিনি৷ আজ (বয়স ৩১) আমি স্বস্তি নিয়ে বলছি যে, আমি সমকামী এবং আবার বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব সবাই বিষয়টি জানার পর আমাকে সমর্থন করেছেন৷’’
ছবি: AP
নিল প্যাট্রিক হ্যারিস
জনপ্রিয় টেলিভিশন কমেডি সিরিজ ‘হাও আই মেট ইওর মাদার’ এর স্টিনসন চরিত্রে অভিনয় করা নিল প্যাট্রিক হ্যারিস (ছবিতে ডানপাশে) ২০০৬ সালে বলেন, ‘‘আমি সমকামী, এই পরিচয় জানাতে পেরে গর্বিত৷’’ ২০১১ সালে নিউইয়র্কে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ হওয়ার পর ২০১৪ সালে হ্যারিস তাঁ সঙ্গী বার্টকাকে (ছবিতে বামে) বিয়ে করেন৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
9 ছবি1 | 9
আপনাকে যদি সিদ্ধান্ত নিতে বলা হতো, আপনি কি তবে সমকামিতাকে বৈধতা দিতেন? লিখুন নীচের ঘরে৷
ইউরোপে সমকামীদের অধিকার
সমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের৷ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ বিস্তারিত দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রান্স
সমকামীদের বিয়ে এবং সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দিতে সরকারি পরিকল্পনার সমর্থনে গত রবিবার প্যারিসে হাজির হন লাখো মানুষ৷ কিছুদিন আগে অবশ্য সেখানে সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে লাখো মানুষ সমবেত হয়৷ এই ইস্যু নিয়ে বেশ উত্তপ্ত সেদেশ৷ বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ এবং ডানপন্থি বিরোধী দল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকে এই আইন করা থেকে বিরত রাখতে চাইছে৷
ছবি: Reuters
নেদারল্যান্ডস
ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতি মিশ্র৷ নেদারল্যান্ডস হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ২০০১ সালের এপ্রিল থেকে সেদেশে এই আইন কার্যকর আছে৷
ছবি: AP
বেলজিয়াম
২০০৩ সালের জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামে সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ বৈধ করা হয়৷ প্রথম দিকে সেদেশে বিদেশিদের মধ্যে এ ধরনের বিবাহে খানিকটা জটিলতা ছিল৷ কিন্তু ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে সকল দেশের নাগরিকদের এই সুবিধা দেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে যে কোনো একজনকে কমপক্ষে তিন মাস বেলজিয়ামে থাকতে হবে৷ ২০০৬ সাল থেকে সমকামী পুরুষ এবং নারীকে সন্তান দত্তক নেওয়ার সুবিধাও প্রদান করা হয় বেলজিয়ামে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্পেন এবং পর্তুগাল
খোসে লুইস রোদ্রিগেজ সাপাতেরো-র সমাজতন্ত্রী সরকারের মেয়াদকালে পৃথিবীর তৃতীয় দেশ হিসেবে স্পেন সমকামীদের মধ্যে বিয়ে বৈধ করে৷ ফ্রান্সের মতো সেদেশেও ক্যাথলিকদের শক্ত অবস্থান রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ২০০৫ সালের জুলাই মাসে স্পেনে এ ধরনের বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ২০১০ সাল থেকে পর্তুগালও একই পথের পথিক হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইওয়াহানা সিগুরডোটির এবং তাঁর সঙ্গিনী ইওহিনা লিওসডোটির সমকামীদের বিয়ে বৈধ ঘোষণার পর প্রথমেই সেই সুযোগ নিয়েছেন৷ সিগুরডোটির হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম মেয়ে সমকামী রাষ্ট্রপ্রধান৷ ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি৷ এরপর ২০১০ সালে সেদেশে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হলে সঙ্গিনী লিওসডোটিরকে বিয়ে করেন সিগুরডোটির৷
ছবি: Getty Images
স্ক্যান্ডিনেভিয়া
সমকামীদের অধিকারের বিষয়ে আইনিভাবেই সচেতন স্ক্যান্ডিনেভিয়া৷ সুইডেনে ২০০৯ সালে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বৈধ করা হয়৷ পুরুষ এবং নারী সমকামী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে সেদেশে কোনো বাধা নেই৷ নরওয়ে ২০০৮ সালে এ সংক্রান্ত এক বিল অনুমোদন করেছে৷ ২০১২ সালের গ্রীষ্ম থেকে ডেনমার্কেও সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ ফিনল্যান্ডও এ ধরনের বিয়েকে বৈধতা প্রদানের পথে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুক্তরাজ্য
এই ছবিটি গত শতকের ৮০-র দশকের৷ এতে দেখা যাচ্ছে, সমকামীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন একদল মানুষ৷ এরপর অনেকদিন পেরিয়েছে৷ যুক্তরাজ্যে সমলিঙ্গের পুরুষ বা নারী যুগল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে রয়েছে এই প্রথা৷ তবে চার্চে সমলিঙ্গের নারী বা পুরুষ বিয়ে করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
জার্মানি
২০০১ সাল থেকে সমলিঙ্গের যুগলের রেজিস্ট্রেশন বৈধ করেছে জার্মানি৷ এই প্রক্রিয়ায় জার্মানিতে বিয়ের সুযোগ সুবিধার অনেকটাই পান সমকামীরা৷ কিন্তু যৌথভাবে সন্তান দত্তক নেওয়া কিংবা পূর্ণ আয়কর সুবিধা এখনো পায়না সমকামী দম্পতিরা৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৬৬ শতাংশ জনসাধারণই সমকামীদের বিয়ের পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পূর্ব ইউরোপ
তবে ইউরোপের পর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেখানকার সমাজে সমকামী নারী বা পুরুষকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়না৷ লিথুনিয়া, পোল্যান্ডের মতো লাটভিয়াতেও বিষমকামী দম্পতির মতো সমান অধিকার পায় না সমকামী দম্পতি৷ পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ জনগণই সমকামীদের বিয়ের বিপক্ষে৷
ছবি: Reuters
রাশিয়া
রাশিয়ার সংসদ সম্প্রতি শিশুদের মাঝে ‘সমকামীদের প্রচারণা’ নিষিদ্ধ করেছে৷ আর আগেই অবশ্য সেন্ট পিটার্সবুর্গের (ছবিতে) মতো বিভিন্ন শহরে সমকামিতাকে উৎসাহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ নতুন এই আইনের ফলে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক প্রচারণা রাশিয়ায় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আয়োজকদের জরিমানা হবে৷ বলাবাহুল্য, রাশিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ নয়৷