তিন জঙ্গি নেতার জন্য মোট ১১ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ পাকিস্তানি তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা ফজলুল্লাহ'র জন্য ৫ মিলিয়ন এবং অন্য দুই জঙ্গি নেতার জন্য ৬ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তান মনে করে পাকিস্তান জঙ্গিদের মদতদাতা৷ এ অভিযোগ পরিষ্কার ভাষাতেই তুলে আসছে দেশ দু'টি৷ অন্যদিকে এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান৷ তবে বিষয়টি এখন আর অভিযোগ উত্থাপন এবং অভিযোগ অস্বীকারের পর্যায়ে থেমে নেই৷
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর পাকিস্তানের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ গত জানুয়ারিতে আফগান তালিবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান – এই অভিযোগে ২ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন৷
বৃহস্পতিবার এলো নতুন ঘোষণা৷ এবার তিন জঙ্গি নেতাকে ধরার জন্য মোট ১১ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করলো যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট৷ স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণায় বলা হয়, মোল্লা ফজলুল্লাহ'র অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারলে দেয়া হবে ৫ মিলিয়ন ডলার আর আব্দুল ওয়ালি ও মঙ্গল বাগ সম্পর্কে জানাতে পারলে প্রত্যেকের জন্য ৩ মিলিয়ন করে মোট ৬ মিলিয়ন ডলার দেয়া হবে৷ মোল্লা ফজলুল্লাহ তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র শীর্ষ নেতা৷ আব্দুল ওয়ালি তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানেরই সহযোগী সংগঠন জামাত-উল আহরারের নেতা৷ মঙ্গল বাগের নেতৃত্বাধীন সংগঠনের নাম লস্কর-ই ইসলাম৷ তিনটি সংগঠনের বিরুদ্ধেই সহিংশতার অভিযোগ রয়েছে৷
তালেবান: যাদের কারণে চাপের মুখে পাকিস্তান
ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার অন্যতম কারণ, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের সাহায্য করছে৷ কিন্তু কেন? পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কই বা কী?
ছবি: Majid Saeedi
গোড়ার কথা
১৯৭৮ থেকে ’৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ পাশতুন জনজাতির যোদ্ধারা সে সময় রাশিযার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পরবর্তীকালে তারাই তালেবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ রাশিয়াকে ঠেকাতে সেই সময় পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকা তালেবানকে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Khan
গৃহযুদ্ধ এবং তালেবান
১৯৯২ থেকে ’৯৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ সেই সময় তালেবান ত্রমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ অভিযোগ, তালেবানদের সেই উত্থানেও পাকিস্তান সাহায্য করেছিল৷ বস্তুত, বিস্তীর্ণ আফগানিস্তান জুড়ে তালেবান যে সরকার গঠন করেছিল, কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়নি৷
ছবি: Majid Saeedi
৯/১১ এবং মার্কিন সৈন্য
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল কায়দা হামলা চালানোর পর অ্যামেরিকা আল কায়দা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ আফগানিস্তানে পৌঁছায় মার্কিন সৈন্য৷ আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই সরকারকে সমর্থন জানায় অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যরাও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে শামিল হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাকিস্তানের লাভ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রথম এবং প্রধান শত্রু আফগান তালেবান নয়, ভারত৷ এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ চালানোর জন্য তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানের প্রয়োজন৷ ভারত বহুবার অভিযোগ করেছে যে, সীমান্তে আটক করা জঙ্গিদের সঙ্গে তালিবান যোগ আছে৷ তালিবান পাকিস্তানেই প্রশিক্ষণ নেয় বলেও অভিযোগ করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
অন্য কূটনীতি
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে আফগানিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তানকে পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে ভুগতে হতে পারে৷ তাই তালেবান প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থান নিতে হয় পাকিস্তানকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
পাকিস্তানেও তালেবান হামলা
গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ পাঁচ তারা হোটেল থেকে ভলিবল স্টেডিয়াম, বাজার থেকে সামরিক ঘাঁটি সর্বত্রই হামলা হয়েছে৷ বারবারই আঙুল উঠেছে তালেবানের দিকে৷ অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও পাকিস্তান তালিবানের প্রতি নরম থেকেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মার্কিন হুমকি
ভারতসহ বেশ কিছু দেশ বার বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে৷ এতদিনে অ্যামেরিকা সে অভিযোগে শিলমোহর দিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিলো যে, পাকিস্তানকে তারা আর কোনও সামরিক সহায়তা দেবে না, কারণ, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
7 ছবি1 | 7
পাকিস্তানে সর্বশেষ বড় জঙ্গি হামলাটি হয়েছিল ২০১৪ সালে৷ সেবার এক সেনাবাহিনী স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩২ জন শিশুকে হত্যা করা হয়৷ তারপর থেকে খুব বড় হামলা না হলেও একেবারে জঙ্গিহামলামুক্ত হতে পারেনি পাকিস্তান৷ এখনো প্রায়ই আসে ছোটখাটো হামলার খবর৷
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, মোল্লা ফজলুল্লাহ, আব্দুল ওয়ালি এবং মঙ্গল বাগ পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্টের জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ৷ সেকারণেই বৃহস্পতিবারের এই পুরস্কার ঘোষণা৷
মোল্লা ফজলুল্লাহ'র তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান দেশের বাইরেও সক্রিয়৷ ২০১০ সালে নিউ ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে ব্যর্থ হামলা চেষ্টার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল তারা৷ আব্দুল ওয়ালির জামাত-উল আহরার'এর এখনো পাকিস্তানের বাইরে হামলা চালানোর রেকর্ড নেই৷ তবে পাকিস্তানে প্রায়ই তারা হামলা চালায়৷ ২০১৬ সালে পেশোয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের কনসুলেটে হামলা চালিয়ে দু'জনকে হত্যা করেছিল তারা৷ মঙ্গল বাগের সংগঠন সাম্প্রতিক সময়েও ন্যাটোর সরবরাহ বহরের ওপর হামলা চালিয়েছে৷