লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ৬৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তি৷ কোনও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাড়ি চালানোর কথা তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
লাইসেন্স ছাড়াই গত ৪০ বছর ধরে গাড়ি চালান এমন এক ব্যক্তিকে বুধবার আটক করা হয়েছে জানিয়েছে জার্মান পুলিশ৷ ৬৭ বছর বয়সি গাড়ি চালককে জার্মানির পশ্চিমের শহর ট্রিয়ারের কাছে থামিয়ে লাইসেন্স চাওয়া হলে তিনি একটি নকল লাইসেন্সের কপি দেখিয়ে বলেন, তার লাইসেন্স অন্য পুলিশ স্টেশনে দেখানো হয়েছে৷ পরে অবশ্য পুলিশের চাপে তিনি বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গত ৪০ বছর ধরে গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করেন৷ পুলিশ জানিয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া ব্যক্তিটি ডেলিভারি ড্রাইভার হিসাবেও বেশ কয়েক বছর কাজ করেছেন৷ লোকটির বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে৷
জার্মানির ‘অটোবান’ বা মোটরওয়ের নিয়মকানুন
ফক্সভাগেন, আউডি, মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ বা ওপেল গাড়ির দেশ জার্মানিতে মোটরওয়ে যে চোখ-ধাঁধানো হবে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷ তবে সেখানেও গাড়ি চালানোর নিয়মকানুন আছে৷
ছবি: Imago/Horst Galuschka
গতিসীমা নেই
জার্মান অটোবানে সাধারণভাবে কোনো গতিসীমা নেই৷ বলতে কি, গোটা ইউরোপের মধ্যে একমাত্র জার্মান মোটরওয়েতেই যত খুশি স্পিডে গাড়ি চালানো যায় – অবশ্য ট্র্যাফিকের আইনকানুন মেনে ও নিজের বা পরের জন্য কোনো বিপদ সৃষ্টি না করে৷ গাড়ি ও মোটরওয়ের দেশে মোটরচালকের কোনো অভাব নেই: ১৭ বছর বয়স হলেই, লাইসেন্স থাকলে কোনো প্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে গাড়ি চালানো যায়৷ বাধাহীন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় ১৮ বছর বয়স থেকে৷
ছবি: Imago/Horst Galuschka
যানজট
জার্মানির জাতীয় অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের নাম হলো – তার আদ্যক্ষর মিলিয়ে – এডিএসি৷ তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে তার আগের বছরের তুলনায় মোটরওয়েতে ১৫ শতাংশ বেশি যানজট ঘটেছে৷ প্রধানত চারটি কারণে: সাধারণভাবে গাড়ির সংখ্যা বাড়ার ফলে; একটি চ্যানেল অধিকাংশ সময় ট্রাক আর লরিতে ভর্তি থাকার কারণে; অটোবানের বিভিন্ন জায়গায় মেরামতির কাজ চলে বলে এবং চতুর্থত, কাছাকাছি কোনো বড় শহর আছে বলে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
সম্মুখে ঠেলিছে মোরে...
অটোবানের ‘ভিতরদিকের’, অর্থাৎ বাঁদিকের চ্যানেলগুলো হল দ্রুতগামী চ্যানেল; ওভারটেক করতে না হলে, ও ধরনের চ্যানেল আটকে গাড়ি না চালানোই ভালো – নয়ত দেখবেন, কোনো ব্যস্তবাগীশ হয়ত পেছন থেকে আপনার ঘাড়ে এসে পড়ে, হর্ন না বাজালেও, বাতি জ্বালিয়ে-নিভিয়ে তার ব্যস্ততা আর বিরক্তি প্রকাশ করছে৷ মনে রাখবেন, শশব্যস্ত হয়ে তাকে রাস্তা ছেড়ে দেবার কোনো তাড়া নেই: কেননা সে যা করছে, সেটাও রীতি ও নীতিবিরুদ্ধ!
ছবি: imago/Jochen Tack
ছবি তোলানোর দাম অনেক হতে পারে
স্পিড ক্যামেরা! জার্মানিতে মোটরওয়ের ধারে-ধোরে এ ধরনের বসানো বা মোবাইল স্পিড ক্যামেরা থাকাটা আজকাল প্রায় স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পরে ডাকপিয়নের হাতে করে আসবে – ছবি সুদ্ধু – স্পিড লিমিট ছাড়ানোর সাক্ষ্যপ্রমাণ ও শেষমেষ জরিমানার তলব৷ ছবিতে গাড়ির নাম্বারপ্লেটের সঙ্গে নিজের শ্রীমুখও স্পষ্ট দেখতে পাবেন, কাজেই পার পাবার কোনো উপায় নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Galuschka
গাড়িতে হাতে মুঠোফোন নিয়ে কথা বলা চলবে না
বিশেষ করে অটোবানে চলন্ত অবস্থায়৷ ধরা পড়লে ১০০ ইউরো জরিমানা আর সেই সঙ্গে ফ্লেন্সবুর্গে ‘গাড়ি পুলিশের’ কালো খাতায় একটি ঢেঁড়া বা পয়েন্ট৷ আর যদি কানে মোবাইল ফোন ধরে গাড়ি চালানোর সময় কোনো অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে, তবে তো রক্ষা নেই: জরিমানা তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্সও কিছুদিনের জন্য বাজেয়াপ্ত হতে পারে৷ এর চাইতে স্টিয়ারিং থেকে হাত না উঠিয়ে ফোন করার ব্যবস্থা রাখাই ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
যানজট হলে অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের জন্য রাস্তা রাখবেন
অর্থাৎ পাশাপাশি দু’টি চ্যানেলের গাড়িকে ডানদিকে ও বাঁদিকে সরে গিয়ে সেই দু’সারি গাড়ির মাঝখানে অ্যাম্বুলেন্স বা পুলিশের গাড়ি যাবার জন্য জায়গা রাখতে হবে৷ কারণ? মোটরওয়েতে যানজট হবার একটা বড় কারণ হলো অ্যাক্সিডেন্ট৷ সেক্ষেত্রে আহতদের দেখাশোনা ও দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি নথিবদ্ধ করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের অকুস্থল অবধি পৌঁছাতে পারা চাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
আর যদি নিজের গাড়ির কিছু হয়?
ধরুন মোটরওয়েতে গাড়ি খারাপ হলে, মূল চ্যানেলগুলোর পাশে ‘অবস্থানের ’ চ্যানেলটিতে গাড়ি পার্ক করে, সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ‘সতর্কতা ত্রিভুজ’ বসাতে হবে; নিজে গাড়ি থেকে নামলে ফ্লুওরেসেন্ট স্ট্রাইপ দেওয়া জ্যাকেট পরে নামতে হবে৷ অটোবানে গাড়ি চালাতে হলে এ সব সাজসরঞ্জাম ছাড়া গাড়িতে একটি ‘ফার্স্ট এইড কিট’ রাখাটা বাধ্যতামূলক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর অনেক বিপদ
এক্ষেত্রে জার্মানি হলো ‘জিরো টলারেন্স’ বা কোনো-মাপ-নেই-এর দেশ৷ মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর সীমা হলো ০ দশমিক ৫ শতাংশ বিএসি বা রক্তে অ্যালকহলের পরিমাণ৷ মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর জরিমানাই শুরু হয় ৫০০ ইউরো দিয়ে; এছাড়া গাড়ি পুলিশের খাতায় ঢেঁড়া, এমনকি একমাসের জন্য লাইসেন্স বাতিল, এ সব তো আছেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতে ‘স্নো টায়ার’
জার্মানিতে শীতকাল মানে পথেঘাটে বরফ পড়ে থাকতে পারে, বৃষ্টির পানি চরম শীতে জমাট বেঁধে ‘কালো বরফ’ তৈরি হয়ে থাকতে পারে – যা খালি চোখে হঠাৎ খেয়াল করা যায় না, বিশেষ করে রাতের আঁধারে৷ কাজেই জার্মানিতে শীত এলে গাড়িতে শীতের টায়ারে লাগানো হলো কর্তব্য – নয়ত বীমা কোম্পানিরা গোঁসা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Kästle
9 ছবি1 | 9
একইরকম ঘটনা আরো ঘটেছে জার্মানিতে৷ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ৬৯ বছর বয়সি নারীর বিরুদ্ধে ৩৯ বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে৷ এক পার্কিং প্লেসে ওই নারী তার গাড়িটি অন্য একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা দেয়ার পর লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর বিষয়টি বেরিয়ে আসে৷ জার্মানিতে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো একটি ফৌজদারি অপরাধ৷ এতে বড় অংকের জরিমানা হতে পারে এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে৷
২০১৪ সালে লাইসেন্স ছাড়া বরুসিয়া ডর্টমুন্ড এর ফুটবল তারকা মার্কো রয়েস তার অ্যাসটন মার্টিন গাড়িটি চালানোর সময় ধরা পড়ায়, তাকে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ইউরো বা ৬ লাখ ৫২ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়৷ রয়েস অবশ্য ২০১৬ সালে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি করেছেন৷২০১৯ সালে একই ক্লাবের আরেক খেলোয়াড় ভিঙ্গার মারিউস ভল্ফকে অতি দ্রুত গাড়ি চালানোর জন্য দুই লাখ ইউরো জরিমানা এবং দুই মাসের জন্য তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়৷
জার্মানিতে সাধারণত বড় অপরাধের জন্য জরিমানার অংক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে অপরাধীর আয় ও অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী৷
এনএস/আলিস্টেয়ার ওয়াল্শ
২০১৮ সালের আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানিতে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করলে যে শাস্তি
জার্মানিতে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করা শুধু অপরাধই নয়, এতে চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত হারাতে পারেন৷ সাইকেল চালাকদের ক্ষেত্রেও তথৈবচ৷ সম্প্রতি এর জন্য জরিমানার পরিমাণ আরো বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/M
জরিমানা আরো বেড়েছে...
আগে গাড়ি চালানোর সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে জরিমানা ছিল ৬০ ইউরো৷ কিন্তু বর্তমানে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০ ইউরো, অর্থাৎ আনুমানিক বাংলাদেশি দশ হাজার টাকা৷ এছাড়াও এমনটা ধরা পড়লে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে চালক পান ‘দুই পয়েন্ট’, যা কিনা দু’শ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে৷ এমনকি সাময়িকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সও হারাতে পারেন চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ
একই নিয়ম গাড়িতে ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও৷ অর্থাৎ গাড়ি চালানোর সময় শুধু স্মার্টফোন নয়, ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহারেও একই আইন প্রযোজ্য
ছবি: picture-alliance/empics/Y. Mok
জার্মানির ট্রাফিক আইন-কানুন খুবই কড়া
জরিমানার পরিমাণ অবশ্য নির্ভর করে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ঘটা অ্যাক্সিডেন্টটি কত বড় তার ওপর৷ যত বড় দুর্ঘটনা বা ক্ষতি হয়, সে অনুযায়ী হয় জরিমানার পরিমাণ৷
ছবি: Imago/kamera24
সাইকেল চালক
অনেক সাইকেল চালককেই মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়৷ এ অবস্থায় ধরা পড়লে নতুন আইন অনুযায়ী তাঁকে জরিমানা হিসেবে দিতে হয় ৫৫ ইউরো৷ যদিও এর আগে ঐ একই অপরাধে জরিমানার পরিমাণ ছিল ২৫ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/Dumont/C. Anzenberger-Fink
বোরকা পরে বা মুখ ঢেকে গাড়ি চলানো নিষেধ
পুরো মুখ ঢেকে বা বোরকা পরে গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে জার্মানিতে৷ কেউ মুখ ঢেকে গাড়ি চালালে তাঁকে গুণে গুণে দিতে হবে ৬০ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
উদ্ধারকারী গাড়ি বাধা পেলে
কারো ভুল পার্কিংয়ের কারণে উদ্ধারকারী গাড়ি, অর্থাৎ অ্যাম্বুলেন্স, দমকল কর্মী বা অন্য কোনো ‘ইমারজেন্সি’ গাড়ির চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে, নতুন আইনে তাকে গুণতে হবে ২০০ ইউরো৷ আর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বা গাড়ি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে চালক পাবে দুই পয়েন্ট, অর্থাৎ দু’শ ইউরো৷ অথচ এ ধরনের অপরাধে আগে মাত্র ২০ ইউরো জরিমানা দিয়েই পার পাওয়া যেত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আরো নিয়মকানুন
এছাড়াও গাড়ি চালকদের বিভিন্ন অপরাধের জন্য জার্মানিতে রয়েছে নানা রকম আইনকানুন৷ অপরাধের মাত্রা বুঝে অপরাধীকে জেল পর্যন্ত খাটতে হতে পারে৷ তাই কিন্ডারগার্টেন, স্কুল বা আবাসিক এলাকায় গাড়ি চালককে ভীষণভাবে সতর্ক থাকতে হয়৷ এ সব জায়গায় ‘স্পিড লিমিটের’ সামান্য হেরফের হলেই জরিমানা! সেকারণেই হয়ত গাড়ি চালকরা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ‘ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ইন্সটিটিউট’ সম্পর্কে সচেতন৷