৪০ মাস এবং এক হাজার ২০৫ দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে আবার শতরান করলেন বিরাট কোহলি।
বিজ্ঞাপন
শতরানের খরা কাটছিল না বিরাট কোহলির। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টে গিয়ে তা কাটলো। শুধু শতরান করাই নয়, প্রায় দুইশ রানের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অপরপ্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকায় মারতে গিয়ে আউট হলেন ১৮৬ রানের মাথায়।
কোহলির এই ইনিংস ছিল একেবারে অন্যরকম। দায়িত্ববোধ নিয়ে খেলা। একটা দিক আটকে রেখেছেন। রান নিচ্ছিলেন এক, দুই করে। শতরান করতে গিয়ে মাত্র পাঁচটি চার মেরেছিলেন। শতরান করার পর কিছুটা হাত খোলেন। কারণ, অস্ট্রেলিয়া ৪৮০ রান তুলেছিল। চোটের জন্য শ্রেয়স আইয়ার খেলতে পারেননি। তাই অস্ট্রেলিয়ার রান পার করে লিড নেয়ার দরকার ছিল ভারতের। সেই কাজটা কোহলি করেছেন। তাকে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন জাদেজা, অক্ষর প্যাটেলরা।
নিজে থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিরাট কোহলি। আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় তিনি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, বোর্ডকে আগে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, রোহিত শর্মাকেও জানিয়েছিলেন। সেইসময়ের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও তার কথা হয়েছিল। বিরাট জানিয়ে দেন, তিনি টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করবেন।
ছবি: AFP/D. Sarkar
কোহলির জায়গায় রোহিত
এরপর কোহলির জায়গায় রোহিত শর্মাকে প্রথমে ভারতের টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়ক করা হয়। কিছুদিন পর একটা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, একদিনের ক্রিকেটেও রোহিতই অধিনায়ক হবেন। বোর্ডের যুক্তি ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে একজনই অধিনায়ক থাকা উচিত।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
সৌরভের সাফাই
কোহলির কাছ থেকে এইভাবে একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ ছিনিয়ে নেয়ার পর প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তখন সৌরভ জানান, কোহলিকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর তিনি কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। কোহলি সেটা শোনেননি। সাদা বলে একজন অধিনায়ক থাকা উচিত বলে নির্বাচকরা রোহিতকে অধিনায়ক করেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
বিরাটের জবাব
এরপর বোমা ফাটান বিরাট কোহলি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌরভ তাকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার কোনো কথা বলেননি। আর একদিনের ক্রিকেটে রোহিতকে অধিনায়ক ঘোষণার দেড় ঘণ্টা আগে তাকে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেটাও দক্ষিণ আফ্রিকায় দল নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পর একেবারে শেষে।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
'বোর্ড দেখছে'
প্রশ্ন হলো, কে ঠিক বলছেন, সৌরভ না বিরাট? সৌরভ এরপর জানিয়েছেন, বোর্ড বিষয়টি দেখছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝখানে বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। দল দেশে ফেরার পর নিতে পারে।
ছবি: privat
গাভাস্কারের মতে
সুনীল মনোহর গাভাস্কার মনে করেন, বিরোধের কারণ, কোহলির বিবৃতি। টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় কোহলি বলেছিলেন, তিনি টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক থাকবেন। তার বলা উচিত ছিল, এই দুই ফরম্যাটে অধিনায়ক থাকতে তার কোনো অসুবিধা নেই। কোহলির কথায় বোর্ড চটেছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo
অশ্বিন বনাম শাস্ত্রী
ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে অন্যতম রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি সম্প্রতি ক্রিকইনফোডটকমে বলেছেন, ২০১৮-১৯-এর অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় কোচ রবি শাস্ত্রীর একটি কথায় ভেঙে পড়েছিলেন। সে সময় একটি টেস্টে স্পিনার কুলদীপ যাদব পাঁচ উইকেট নেয়ার পর রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, কুলদীপই এখন ভারতের সেরা স্পিনার। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল বোলার অশ্বিন এই কথাটা মেনে নিতে পারেননি বলে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Parks
শাস্ত্রীর জবাব
রবি শাস্ত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, সবার টোস্টে মাখন মাখানো একজন কোচের কাজ নয়। তার কাজ, কোনো এজেন্ডা ছাড়া ঠিক তথ্য পরিবেশন করা। কুলদীপ সেই টেস্টে অসাধারণ বল করেছিলেন এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এত ভালো বল করেছিলেন বলেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন শাস্ত্রী।
ছবি: dapd
শাস্ত্রী খুশি
শাস্ত্রীর বক্তব্য, তার ওই মন্তব্যের ফলে অশ্বিন আরো ভালোভাবে নিজের কাজটা করেছেন। তাই তিনি খুশি। শাস্ত্রীর দাবি, তার মন্তব্যের পরই অশ্বিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। উপরের ছবিতে মহম্মদ শামির সঙ্গে শাস্ত্রী।
ছবি: IANS
9 ছবি1 | 9
এই শতরান করে একটা রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। ভারতে সবধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে সবচেয়ে দ্রুত ৭৫টি শতরান করার রেকর্ড। কোহলির আগে এখন আছেন শচিন টেন্ডুলকর।
তবে করোনার পরে কোহলির ব্যাটে দীর্ঘদিন খরা চলছিল। এর আগে তিনি এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে শতরান করেছেন। কিন্তু টেস্টে শতরান আসছিল না। সেই খরা কাটিয়ে আবার স্বমহিমায় কোহলি। তবে এবার দুইশ রান করলে তিনি হ্যামন্ডকে টপকে যেতে পারতেন। কোহলি ও হ্যামন্ড দুজনেই সাতবার দুইশ রান করেছেন।
দুইশ রান করার ক্ষেত্রে এক নম্বরে ব্র্যাডম্যান। তিনি ৫২টি টেস্ট খেলে ১২বার দুইশ করেছেন। সঙ্গকারা করেছেন ১১ বার। ব্রায়ান লারা করেছেন নয়বার।