এই ভিডিওটি এখনো খুব বেশি মানুষ দেখেননি৷ তবে যাঁরা নারীর এগিয়ে চলার পক্ষে, যাঁরা বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় উঁচু আসনে দেখতে চান, তাঁরা নিশ্চয়ই দেখবেন খুব সাধারণ ঘরের এই মেয়েদের অসাধারণ সাফল্য তুলে ধরা এই ভিডিও৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের খুব জনপ্রিয় একটি ইংরেজি দৈনিকের শিরোনাম, ‘‘মেয়েরা সাফল্যের সীমানা উঁচু করেছে৷’’ সত্যিই তাই৷ ঢাকায় শেষ হয়েছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপের খেলা৷ সেখানে ইরান, সিঙ্গাপুর, কিরগিজস্তান, তাইওয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাংলাদেশ- এই ছয় দেশের মেয়েদের ফুটবল লড়াইয়ে হেসেখেলে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ৷
৫ ম্যাচের একটি বাকি থাকতেই সেরা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ৷ প্রথম দুই ম্যাচে ইরানকে ৩-০ এবং সিঙ্গাপুরকে ৫-০ গোলে হারিয়ে কৃষ্ণা, সানজিদা, মারিয়া, মৌসুমীরা প্রমাণ করেছিলেন, এ আসরে শ্রেষ্ঠত্বের জন্যই তাঁরা লড়বেন৷ তৃতীয় ম্যাচে কিরগিজস্তানকে বিধ্বস্ত করলেন তাঁরা ১০-০ গোলে৷
তখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৮ বার বল পাঠালেও একটাও গোল খায়নি বাংলাদেশ৷ চতুর্থ ম্যাচে তাইওয়ানের সঙ্গে দুটি গোল খেলেও চার গোল করে সহজ জয়ই পায় বাংলাদেশের মেয়েরা৷ সেই ম্যাচেই নিশ্চিত হয়ে যায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলা৷ তারপরও আত্মতৃপ্তিতে ভোগেনি কৃষ্ণা সরকারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল৷ শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েই এশিয়ার সেরা আট দলের লড়াইয়ে নিজেদের শামিল করেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা৷ ৫ ম্যাচে ৮ গোল করে আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা সরকার৷
এশিয়ার সেরা আটটি দেশকে নিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২০১৭ সালে৷ থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সে আসরে ‘অটোম্যাটিক চয়েস’ হিসেবে খেলবে মেয়েদের ফুটবলে এশিয়ার পরাশক্তি উত্তর কোরিয়া, জাপান, চীন এবং স্বাগতিক থাইল্যান্ড৷ বাকি চারটি দেশকে বাছাইপর্বে সেরা হতে হবে৷ গ্রুপ ‘সি’-তে সেরা হলো বাংলাদেশ৷ আরেক গ্রুপে সেরা হয়ে অস্ট্রেলিয়াও চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে৷ বাকি দুই গ্রুপের বাছাইপর্ব এখনো শেষ হয়নি৷
এসিবি/এসবি
ওদের সেরা হয়ে ওঠার কাহিনি
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলে ফেলেছে৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: Constantin Stüve
হতাশা দিয়ে শুরু
না, এখানে কলসিন্দুরের মেয়েদের হতাশার কথা বলা হচ্ছে না৷ বলা হচ্ছে মফিজ উদ্দিনের কথা৷ স্থানীয় ছেলেরা কোনো কাপ জিততে না পারায় একরকম হতাশ হয়েই ২০১১ সালে মেয়েদের দিয়ে ফুটবল খেলানোর চিন্তা শুরু করেছিলেন ফুটবল কোচ মফিজ উদ্দিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
পথটা মসৃণ ছিল না
বাংলাদেশের মতো দেশে মফিজ উদ্দিনের পরিকল্পনা যে সহজে বাস্তবায়িত হওয়ার নয় তা বোধগম্য৷ সেটা হয়ওনি৷ ছিল বাবা-মার কাছ থেকে বাধা, ছিল সামাজিক বাধাও৷ কিন্তু তারপরও কয়েকজন মেয়েকে ফুটবলে নিয়ে আসতে সমর্থ হন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সুযোগ যখন এলো
২০১১ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মেয়েদের ফুটবলের আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে৷ মফিজ উদ্দিন এই সুযোগটা কাজে লাগান৷ স্থানীয় স্কুলের সহযোগিতায় তিনি একটি দল গঠন করেন, যেটা স্থানীয় পর্যায়ে সফলতার পর জাতীয় পর্যায়েও সেরা হয়৷
ছবি: picture-alliance/M.i.S.-Sportpressefoto
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা
শুধু জাতীয় পর্যায়ের সফলতা নিয়ে থেমে থাকেনি কলসিন্দুরের মেয়েরা৷ চলতি বছর নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে তারা৷ প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলেও নেপালে ভূমিকম্পের কারণে খেলাটা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি৷
ছবি: picture alliance/Norbert Schmidt
কলসিন্দুরের ‘মেসি’
একেবারে বামে যাকে দেখছেন তার নাম তহুরা খাতুন৷ বয়স ১২৷ সবাই তাকে কলসিন্দুরের ‘মেসি’ বলে ডাকে৷ এত সাফল্যের পরও তহুরার দাদার চিন্তা, ফুটবল খেলার জন্য হয়ত তহুরা ভালো কোনো স্বামী পাবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বুট তুলে রেখেছে রুমা
তহুরার সঙ্গে খেলতো ১৩ বছরের রুমা আক্তার৷ কিন্তু বাবার আপত্তির কারণে খেলা ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে৷ তার বাবা মনে করেন, রুমা ফুটবল খেলে পরিবারের অসম্মান ডেকে এনেছে৷ কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপিকে রুমা জানিয়েছে, ‘‘আমি চাই মানুষ আমাকে আমার মেধার জন্য চিনুক৷ আমি আমার মায়ের মতো শুধু গৃহিনী হয়ে কিংবা স্বামীর দয়ার উপর জীবন কাটাতে চাই না৷’’