অনেকের মতে তিনিই বিশ্বের সব চেয়ে স্থূলকায়া নারী৷ তাঁর ওজন প্রায় ৫০০ কেজি৷ মিশর থেকে তিনি এসেছেন মুম্বাই-এর একটি হাসপাতালে৷ রোগা হতে চান তিনি৷ তাঁর এই অস্বাভাবিক স্থূলত্ব নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা৷
বিজ্ঞাপন
গত শনিবার মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে মুম্বাইয়ের হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে মোটা নারী হিসেবে পরিচিত ইমান আহমেদ৷ তাঁর এই অস্বাভাবিক স্থূলতা একটা জটিল রোগবিশেষ, যা নিরাময় করার সুযোগ-সুবিধা কম জায়গাতেই আছে৷ চিকিৎসার খরচও প্রচুর৷ আলেকজান্দ্রিয়া থেকে মুম্বাইতে আনতে ঘাম ছুটে গেছে হাসপাতাল কর্মীদের৷
গত ১৩ বছর ধরে তিনি বিছানায়৷ নড়াচড়া করার ক্ষমতাটুকুও নেই৷ ইমানকে প্রথমে আনা হয় একটি বিশেষ মালবাহী বিমানে৷ বিমান থেকে ক্রেনে করে নামিয়ে তোলা হয় এক বিশেষ ট্রাকে৷ তারপর নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাই-এর চার্নি রোডের সাইফি হাসপতালে৷ হাসপাতালের দোতলায় ইমানের জন্য তৈরি বিশেষ খাটে শোয়ানোও হয় ক্রেনে করে৷ ইমানের চিকিৎসক ড. মুফাজজল লাকড়াওয়ালা৷ মুম্বাইয়ের হাসপাতাল পর্যন্ত আনতেই খরচ হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা, জানান ড. লাকড়াওয়ালা৷
তিনি জানান, ৩৫ বছর বয়সি ইমানের চিকিৎসার জন্য মাসখানেক ধরে চলবে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা৷ করা হবে নানা ধরণের টেস্ট৷ দেখা হবে লেপটিনের মতো জেনেটিক ত্র্রুটি আছে কিনা৷ ইমানের জেনেটিক টেস্টের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী চিকিত্সার পরিকল্পনা করা হবে৷ দেহের জলীয় পদার্থ নিষ্কাশনেও সময় লাগবে চার সপ্তাহের মতো৷ চিকিৎসাসূচির মধ্যে আছে দুটো অপারেশন, ডায়েট প্ল্যান, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি৷
প্রথম বারিয়াট্রিক অপারেশনের পর ইমানের ওজন ৮০ থেকে ১০০ কেজির মতো কমবে৷ এই অপারেশনের নাম গ্যাস্ট্রোক্টমি৷ পাকস্থলির আকার এখন যা আছে তার থেকে ১৫ শতাংশ ছোট করা হবে৷ ছোট করার পর দেহ সঙ্কুচিত হবে এবং ইমান সাধারণ বিমানের বিজনেস ক্লাসের সিটে বসেই তাঁর আলেকজান্দ্রিয়ার বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন বলে জানালেন বারিয়াট্রিক সার্জেন লাকড়েওয়ালা৷ তারপর আবার ইমানকে আসতে হবে দ্বিতীয় অপারেশনের জন্য যার নাম সাডি৷ আন্ত্রিকের লুপগুলি কেটে ছোট করা হবে৷ এখন ইমানকে দেয়া হচ্ছে কম ক্যালোরি, হাই প্রোটিন এবং তরল খাবার৷ পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে লাগবে মোটামুটি চার বছর৷ পাঁচ বছর আগে ইমানের ওজন ছিল ৩৩০ কেজির মতো৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণের মতো, জানালেন ইমানের সঙ্গে আসা তাঁর বোন সায়মা৷
ওজন কমানো এবং স্লিম থাকার অভিনব ৭ উপায়
ওজন বেড়ে যাওয়া সারা বিশ্বেই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এতে যে দেখতে অসুন্দর লাগে তা-ই নয়, মোটা শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ-বিসুখও৷ জেনে নিন, অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রেখে স্লিম থাকার সহজ কিছু ট্রিকস৷
ছবি: Colourbox
চোখের আড়াল, মনের আড়াল
‘চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল’ – এই প্রবাদবাক্যটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কিন্তু খুবই প্রযোজ্য, কারণ, খাবার দেখলেই যে অনেকের খিদে পেয়ে যায়৷ তাই তৈরি বা রান্না করা খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার দিয়ে ঢেকে রাখুন, যেন প্রথমেই চোখে না পড়ে৷ খাবার না দেখলে খাওয়ার আগ্রহও কমে যাবে৷ আর এতে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Junos
রান্নাঘরেই টিভি বা কম্পিউটার
টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় অনেকেই চিপসের প্যাকেট বা এ ধরনের ফ্যাটযুক্ত খাবার সাথে নিয়ে সোফায় আরাম করে বসেন৷ আর সারাক্ষণ খেতে থাকেন৷ এ সব খাবার ওজন বাড়ানোয় বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ আপনি যদি টিভি বা কম্পিউটারটা রান্না ঘরেই রাখেন, তাহলে এ সব যন্ত্রই হয়ত আপনাকে খাওয়া থেকে দূরে রাখবে৷
ছবি: Colourbox/Andy Dean Photography
কীভাবে ?
অ্যামেরিকার পুষ্টি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ব্রায়ান ওয়েজনিকের করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, কিচেনে বসে বিনোদনমূলক কোনো অনুষ্ঠান দেখার সময় অংশগ্রহণকারীরা কমপক্ষে ২০০ ক্যালোরি কম গ্রহণ করেছেন এবং এতে করে বছরে ১০ কেজি ওজন কমেছে৷
ছবি: Colourbox
সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রান্নাঘর যতটা গুছানো আর ছিমছাম থাকবে, ওজন কমানো কিন্তু ততটাই সহজ হবে৷ রান্নাঘরে খাবার-দাবার বা জিনিসপত্র একদমই এলোমেলো করে না রেখে যেখানে যা রাখার ঠিকঠাকমতো রাখুন৷ তখন আপনার এমন অনুভূতি হবে যে মনে হবে সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, এমনকি আপনার শরীরের ওজনটাও! এতে মানসিক শক্তি পাবেন৷ যে কোনো নতুন কিছু করার জন্য তো এই মানসিক শক্তিই বেশি প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ফ্রিজ গুছিয়ে রাখুন
যেসব খাবার মোটা করে সেই খাবারগুলো ফ্রিজে ভেতরের দিকে রাখুন৷ আর যেসব খাবার তেমন মোটা করেনা বা ওজন বাড়ায় না, সেগুলো সামনের দিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন৷ কিচেনের গ্লাস লাগানো আলমারিগুলোর ক্ষেত্রেও ট্রিকস প্রযোজ্য৷ অর্থাৎ চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট, বাদাম বা চকলেট জাতীয় খাবার একটু আড়াল করে রাখুন৷
ছবি: Colourbox
টেবিলে ফলমূল রাখুন
রান্নাঘর এবং বসার ঘরের টেবিলে ফলমূল রাখুন৷ বসার ঘরের টেবিলে এমন সব ফল রাখুন যেন হালকা খিদের ভাব হলে তা সেগুলো না কেটেই চট করে মুখে দেওয়া যায়৷ সোজা কথা, খিদের ভাব হলে যেন চোখের সামনে রাখা ফল খেতে পারেন৷
ছবি: Colourbox
ফুলের সুগন্ধ খিদে কমায়
খাবার ঘর বা রান্না ঘরের টেবিলে অন্তত একটি করে তাজা ফুল রাখুন, কারণ, ফুলের সুগন্ধ খাবারের সুগন্ধকে ছাপিয়ে যায়৷ মাঝে মাঝে ফুলের কাছে নাক নিয়ে সুগন্ধ গ্রহণ করুন৷ এতে করে বার বার খাওয়ার ইচ্ছে বা ‘খাই খাই’ ভাবটা দমন হবে৷ যদি তাজা ফুল রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর গোলাপ বা জেসমিন ফুলের গন্ধযুক্ত ‘রুম স্প্রে’ ছড়িয়ে দিন৷ সুবাসিত মোমবাতি জ্বালিয়েও কিন্তু একই ফল পেতে পারেন!
ছবি: Colourbox
7 ছবি1 | 7
ইমানকে বারিয়াট্রিক অপারেশনের জন্য মুম্বাইয়ে আনার কোনো বিশেষ কারণ আছে অবশ্যই৷ ভারতে ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম' শিল্প দিনকে দিন প্রসারিত হচ্ছে৷ তার প্রধান কারণ ভারতে কম খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা আছে৷ তাই দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের মতো বড় বড় শহরগুলিতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আছে, যেখানে আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সঙ্গে আছে দক্ষ ডাক্তার৷ অথচ খরচ উন্নত দেশগুলি চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম৷ তার উপর ভাষা সমস্যা নেই৷ ইংরেজি ভারতের মহানগরীগুলিতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম৷ তাই মেডিক্যাল ট্যুরিজম মানচিত্রে ভারতের আকর্ষণ বাড়ছে৷
কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের শ্বেতপত্র অনুসারে আগামী ২০২০ সালে ভারতে মেডিক্যাল ট্যুরিজমের বাজার ৮০০ কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে৷ ভারতে যত ‘মেডিক্যাল ট্যুরিস্ট' আসেন, তার ৪০ শতাংশ বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের৷ বেশি রোগী আসেন বাইপাস অপারেশনের মতো হার্টের অসুখে, বোন-ম্যারো প্রতিস্থাপন, চোখ অপারেশন এবং হিপ ট্রান্সপ্লান্টের জন্য৷ অপারেশন পরবর্তী আরোগ্যকালীন সময়টা রোগীরা হয় হাসপাতালে কিংবা হাসপাতালের কাছাকাছি কোনো ভাড়া বাড়িতে থাকতে পারেন৷ সেই রকম ব্যবস্থা আছে৷ আছে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা সুবিধা৷ পাশাপাশি ভারত সরকারের মেডিক্যাল ট্যুরিস্টদের ভিসা নিয়ম অনেক উদার৷ মোটকথা, বিশ্বের সবথেকে স্থূলাঙ্গী মহিলা কতটা তন্বী হতে পারবেন, তা সময়কালেই বোঝা যাবে৷
পাতলা মানুষ বেশি দিন বাঁচে
সারা বিশ্বেই মোটা হওয়া বা মুটিয়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অতিরিক্ত মোটা মানুষদের দেখতে যে শুধু খারাপ লাগে তা নয়, বাড়তি ওজন মৃত্যু পর্যন্ত এগিয়ে আনে৷ এ বিষয়ে গবেষকদের দেওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/Beyond
রোগা মানুষ বেশি দিন বাঁচে
সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে করা গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, কর্মঠ বা সক্রিয়, মোটা মানুষের চেয়ে অলস, পাতলা মানুষই নাকি বেশি দিন বঁচে থাকে৷ গবেষণা বলছে, শারীরিক ফিটনেসের চেয়েও ওজন কম থাকা বেশি জরুরি এবং সে কারণেই তারা নাকি বেশি দিন বাঁচে৷ ৩০ বছর ধরে লাখ মানুষকে নিয়ে করা গবেষণাটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: haveseen - Fotolia
ওজন বাড়ার জন্য শুধু চর্বিই দায়ী নয়!
বিখ্যাত দ্য ল্যানসেট পত্রিকার ডায়াবেটিস ও অ্যান্ডোক্রিনলজি বিষয়ক সংখ্যায় প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা গেছে, ওজন বাড়ানোর জন্য শুধু চর্বি বা ফ্যাটই দায়ী নয়৷ এক বছর ধরে ৬৮ হাজার মানুষের মধ্যে করা সমীক্ষা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, যারা চর্বিজাতীয় খাবার বাদ দিয়েছিলেন তাদের চেয়ে, যারা শর্করা জাতীয় খাবার খাননি, তাদের ওজনই বেশি কমেছে৷ অর্থাৎ ওজন কমাতে চাইলে আগে শর্করা বাদ দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সঙ্গীরা সাবধান!
‘পোশাকগুলো তো দেখছি আজকাল গায়ে আরো টাইট হচ্ছে৷’ আপানার প্রিয়া বা প্রিয়তমকে এ ধরণের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন৷ কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল জানিয়েছেন, সঙ্গীর এ রকম বিরূপ মন্তব্যে ফল হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ কম খাওয়ার পরিবর্তে তখন আরো বেশি করে খেয়েছেন সঙ্গীরা৷ অথবা খাওয়া নিয়ে নানা ধরণের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Andreas Gebert
ওজন কমাতে ভুল পানীয় নয়
ডায়েটিং করতে যেয়ে অনেকেই ‘ডায়েট কোক’-এর মতো মিষ্টি পানীয় পান করেন৷ এ সব মিষ্টি পানীয় নিজের অজান্তেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো নানা অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ এ কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি মিলার স্কুল অফ মেডিসিন-এর গবেষকরা৷ তাই ওজন কমাতে চাইলে সুগার-ফ্রি পানীয় নয়, বরং চিনি ছাড়া গ্রিন-টি এবং সাধারণ পানি পান করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ওজন কমানোর সহজ উপায়!
খাবারে কী কী উপাদান দিচ্ছেন, কেন দিচ্ছেন, কেমন করে রান্না করছেন এবং কতক্ষণ রান্না করছেন – তার দিকে খেয়াল রাখুন৷ সোজা কথা, খাবার নিজে তৈরি করুন এবং বুঝে-শুনে খান৷ দেখবেন খুব সহজেই ওজন কমে যাবে৷ কারণ ‘ঘরের রান্নাই ওজন কমানোর সহজ উপায়’৷ কোলন ও জুরিখের গবেষকরা একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন এ তথ্য৷ হেল্থ সাইকোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি৷