ভারতীয়রা ৫০০০ বছর আগে বিমান চালাত, স্টেমসেল নিয়ে গবেষণা করত, এমনকি মহাজাগতিক অস্ত্রও তাদের হাতে ছিল – আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, একথাই বলেছেন ভারতের ইতিহাস গবেষণা কাউন্সিলের প্রধান৷
বিজ্ঞাপন
কাউন্সিল প্রধান অধ্যাপক ওয়াই সুদর্শন রাও এ সবের উদাহরণ দিতে গিয়ে ভারতীয় মহাকাব্যের উল্লেখ করেছেন৷ বলেছেন, প্রাচীন পৃথিবীকে বুঝতে হলে হিন্দু মহাকাব্যই যথেষ্ট৷ এর জন্য কোনো গবেষণা বা তথ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করার দরকার নেই৷ তাঁর এই মন্তব্যে ইতিহাসবিদদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷
ভারতীয় জনতা দল সবশেষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করলে রাওকে এই গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়৷ আধুনিক ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা মনোভাবকে আঙুল দেখিয়ে যেন হিন্দু মূল্যবোধ ও পৌরাণিক কাহিনি থেকে শিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করছেন বিজেপি নেতারা৷
ভারতের মঙ্গল অভিযান উদযাপন
এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গল অভিযানে সফল হয়েছে ভারত৷ ৩০০ দিন আগে শুরু হয়েছিল এই অভিযান৷ এরপর ২৪শে সেপ্টেম্বর প্রথম চেষ্টাতেই মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পৌঁছানোর খবরে আনন্দে নেচে ওঠে ভারত৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
খুশির জোয়ার
কর্নাটকের শ্রীহরিকোটা থেকে পিএসএলভি রকেটে চড়ে ২০১৩ সালের ৬ই নভেম্বর শুরু হয়েছিল মঙ্গলযানের যাত্রা৷ বুধবার ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ৪১ মিনিটে আসে সুখবর৷ মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে মঙ্গলযান মার্স অরবিটার মিশন, সংক্ষেপে ‘মম’৷ টেলিভিশনে এ দৃশ্য দেখে ভারতীয়রা আনন্দে ফেটে পড়েন৷ ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/Abhishek N. Chinnappa
বিজয় উদযাপন
ঐতিহাসিক এই সাফল্যের মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ছিলেন ইসরো-তে৷ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এনে দেয়া এ সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘এ অর্জন ভারতের সব নাগরিকের৷ আমরা অজানার দেশে পৌঁছানোর সাহস দেখিয়েছি এবং অবশেষে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছি৷’’
ছবি: Reuters/India's Press Information Bureau
উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
‘মঙ্গলযান’ আগামী ছয় মাস মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া ও পরিবেশ পরীক্ষা করে দেখবেন বিজ্ঞানীরা, দেখবেন কোনো জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক মিথেন গ্যাস সেখানে আদৌ আছে কিনা৷ ভারত এখন মঙ্গল এবং চাঁদে আরো অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ পরবর্তী অভিযানটি ২০১৮ সালে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/Manjunath Kiran
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনও পেছনে...
মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতের এই সাফল্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর চীনের মতো দেশগুলোর জন্যও বিশেষ বার্তা৷ এ পর্যন্ত মঙ্গল অভিযানের চেষ্টা হয়েছে ৫১ বার, সফল হয়েছে মাত্র ২১টি প্রয়াস৷ ভারত সেখানে প্রথম চেষ্টাতেই সফল৷ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সংস্থা নাসা-ও টুইটারে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-কে অভিনন্দন জানিয়েছে৷
ছবি: Twitter
কম খরচে সেরা সাফল্য
সবচেয়ে কম খরচে সফলভাবে মঙ্গল অভিযান শুরু করল ভারত৷ ‘ম্যাভেন’ মহাকাশযান পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ৬৭০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল, সেখানে মঙ্গলযানের পেছনে ভারতের খরচ মাত্র ৭৪ মিলিয়ন ডলার!
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
ক্ষমতার খেলায় বড় অগ্রগতি
চীন আর জাপানের মঙ্গল অভিযান এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ৷ ভারতের সাফল্য তাদের জন্য এক ধরণের ধাক্কা৷ ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজগোপালন মনে করেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা চলছে, তার মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞানের স্থান নিঃসন্দেহে ওপরের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমালোচনা এবং জবাব
ভারতের মতো দেশ, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত, সেখানে মঙ্গল অভিযান কতটা প্রয়োজন? কোনো কোনো সমালোচক এভাবে ভারতের অর্জনকে ছোট করতে চাইলেও, বিশ্লেষকদের মতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির এ যুগে এই সাফল্য যে কোনো বিবেচনাতেই খুব বড় অর্জন৷ এ সাফল্য ভবিষ্যতে দারিদ্র্যসহ ভারতের অন্য অনেক সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
7 ছবি1 | 7
এক সাক্ষাৎকারে রাও মহাভারত ও রামায়ণ থেকে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সেখানে প্রেম ও যুদ্ধ, সত্য-মিথ্যা, নানা অস্ত্রের কথা উল্লেখ করেন৷ হিন্দু মহাকাব্যগুলোর বয়স নিয়ে বরাবরই বিতর্ক রয়েছে৷ ইতিহাসবিদদের দাবি, অন্তত দুই হাজার বছর আগে এগুলো লেখা হয়েছে৷ রাও বলেন, এত আগে লেখা হয়েছে বলে এগুলোই অকাট্য প্রমাণ, কেন না মানুষ শিল্প ও উপন্যাস মাত্র কয়েক শতক আগে লেখা শুরু করেছে৷
এছাড়া বিতর্কিত হিন্দু জাতীয়তাবাদী দীনানাথ বাত্রাকে বিজেপি পাঠ্য বই লেখার দায়িত্ব দিয়েছিল৷ জুন মাসে গুজরাটের কয়েক হাজার স্কুলে বাত্রার লেখা পাঠ্যবই দেয়া হয়৷ সেখানে লেখা হয়েছে প্রাচীন ভারতে গাড়ি আবিষ্কার হয়েছিল এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের বলা আছে একটি বড় জাতিগোষ্ঠীর মানচিত্র আঁকতে, যেখানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান রয়েছে৷ বাত্রা অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, তারা চায় প্রতিটি স্কুলে এই বইগুলো দেয়া হোক৷
বাত্রা-র শিক্ষা বাঁচাও আন্দোলন সমিতির সেক্রেটারি অতুল কোঠারি রয়টার্সকে বলেন, ‘‘বর্তমানে ভারতে যেসব ইতিহাসের বই রয়েছে, তাতে এটাই মনে হয় ভারতীয়রা কিছুই জানে না৷ কিন্তু সত্য হল ইতিহাসের দিক থেকে আমরা উচ্চ শ্রেণির৷ ''
এর আগে সবশেষ বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছিল৷ পরে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এসে এর পরিবর্তন করে৷ শিক্ষা মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা৷ তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আধুনিক বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারকে প্রাচীন ভারতের আবিষ্কার হিসেবে জনসম্মুখে উল্লেখ করেছিলেন৷ ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য এই প্রথম৷
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত রোমিলা থাপর বলেছেন, ‘‘এটা একধরনের হীনমন্যতার লক্ষণ৷ সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হলো অনেক মানুষই কোনো প্রশ্ন ছাড়াই এসব বিষয় বিশ্বাস করেন এবং করবেন৷''