৫০ বছর আগে ‘আইকনিক' রুবিক্স কিউব উদ্ভাবন করেছিলেন হাঙ্গেরির এর্নো রুবিক৷ এই সময়ে পৃথিবী আমূল পাল্টে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জলবায়ু পরিবর্তন থেকে জনবিস্ফোরণ–সবমিলিয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে, মন্তব্য হাঙ্গেরিয়ান উদ্ভাবকের৷
প্রায় তিন বাই তিন বাই তিন ইঞ্চি মাপের নানারঙের এই ধাঁধার বাক্সটি তৈরি করেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান উদ্ভাবক রুবিক৷ এটি হাঙ্গেরির অন্যতম সেরা উদ্ভাবন বললে ভুল হবে না৷ শিশু থেকে বৃদ্ধ–এই রুবিক্স কিউব সারা বিশ্বে সমাদৃত, জনপ্রিয়৷ এখনো পর্যন্ত সারা বিশ্বে কয়েক কোটি রুবিক্স কিউব বিক্রি হয়েছে৷ সেই কিউবের স্রষ্টার বয়স এখন আটাত্তর৷ এরনো রুবিক বুদাপেস্টের শহরতলির বাড়িতে মন দিয়ে বাগান করতে ভালবাসেন৷ বাগানের যত্ন নিতে নিতে তিনি সংবাদসংস্থার প্রতিনিধিকে বলেন, ‘‘প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বে এত উন্নতি হয়েছে৷ তবে সবমিলিয়ে ভারসাম্যের বদল নেতিবাচক৷শিক্ষাক্ষেত্র থেকে সবকিছুই বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছে৷ পৃথিবীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগটাও জরুরি৷''
ভিডিও গেম: পিক্সেল থেকে ভার্চুয়াল বাস্তবতা
প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ভিডিও গেমও বদলেছে সময়ের সাথে৷ ডট, পিক্সেল, টুডি, থ্রিডি, মোশন কন্ট্রোলের যুগ পেরিয়ে গেমিং এখন এসে পৌছেছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
ডটের সাহায্যে মহাকাশে লড়াই
তখনও ভিডিও গেইম সহজলভ্য হয়নি, শিশুদের বেডরুমেতো নয়ই৷ সেসময় কম্পিউটার থাকতো বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ শিক্ষার্থীরা সেখানে এই যন্ত্রের কর্মদক্ষতার পরিচয় পেতো৷ বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন কম্পিউটার গেমের একটি দ্য গেম স্পেসওয়ার৷ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্টিভ রাসেল ১৯৬২ সালে এটি তৈরি করেন৷ তার সাথে ছিলেন মার্টিন গ্রায়েৎজ এবং ওয়েন উইটানেন৷
ছবি: Computer Recreations, Inc./Steve Russel
কম্পিউটার যখন ঘরে
সময় যত গড়ালো কম্পিউটারও আকারে তত ছোট হতে থাকলো৷ ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে হোম কম্পিউটার আর গেম কনসোল চলে এলো হাতের নাগালে, শুধু পয়সা খরচ করলেই চলে৷ আজকের বিবেচনায় সেগুলোর গ্রাফিক্স কিংবা খেলার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত৷ তখন কম্পিউটারে কল্পনার চিত্রায়নের চেয়েও ডেভেলপারদের কাছে যন্ত্রটির শক্তিমত্তার বিকাশ ঘটানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীনির্ভর ‘এলিট’ ১৯৮৪ সালে কম্পিউটার গেমিংয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে৷ মহাকাশযানের ককপিটে বসে গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে হাজারো গ্রহ দেখা; ঠিক যেন বাস্তবেই ঘটছে, খেলোয়াড়দের এমন অনুভূতি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই গেমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Staedele
সেভ! সেই সুযোগ নেই
শুরুর দিকের গেমিং কনসোলগুলোতে মেমোরির কোনো কাজকারবার ছিল না৷ অর্থাৎ, একবার খেলা শুরু করলে মাঝখান থেকে আর বন্ধ করে রাখা বা পরে সেখান থেকে শুরুর কোনো উপায় ছিল না৷ কনসোল বন্ধ করে দিলে পুরো গেমটিই শেষ হয়ে যেতো, পরে আবার শুরু করতে হতো নতুন করে৷ আজকের যুগের কনসোলের মেমোরির সঙ্গে তুলনা করলে হয়তো অবিশ্বাস্যই শোনাবে৷
ছবি: Nintendo EAD
দ্বিমাত্রিক থেকে ত্রিমাত্রিকতায়
১৯৯৩ সালে ডুম আর ১৯৯৬ সালে কোয়াকের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় জনপ্রিয় ফাস্ট পার্সন শুটারধর্মী গেমের৷ ধ্বংসাত্মক এই গেম দুইটি সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ তবে অনেক জায়গায় এটি নিষিদ্ধও করা হয়৷ গেম দুটিতে প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার ডেভেলাপাররা ত্রিমাত্রিক দুনিয়া তৈরি করতে সক্ষম হন৷ সেখানে স্বাধীনভাবে চরিত্রকে নড়াচড়া করানোর সুযোগ পান খেলোয়াড়রা৷
ছবি: id Software
বাস্তবানুগ ছবি আর সংগীত
সিডি রমের উদ্ভাবনের সাথে ডিজিটাল গেমেরও প্রসার ঘটে৷ তখন ফ্লপি ডিস্কে বড়জোর এক দশমিক চার মেগাবাইট জায়গা ছিল, কনসোলে তার চেয়ে কিছুটা বেশি৷ অন্যদিকে সিডি নিয়ে এলো ৭০০ মেগাবাইটের ‘বিশাল’ এক জায়গা৷ তার ফলে গেমেও চলচ্চিত্রের মতো দৃশ্যধারণ, সম্পাদনা, বাস্তবানুগ গ্রাফিক্স এবং উচ্চ মানের শব্দ সংযোজনের সুযোগ মিলল৷
ছবি: Cyan Worlds
চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্স
অতীতের অনেক থ্রিডি গেমই তার আবেদন ধরে রাখতে পারেনি৷ আজকের গেমারদের কাছে সেগুলো অনেকটা হাস্যকরই মনে হবে৷ গ্রাফিক্স কার্ড যত শক্তিশালী হতে থাকলো, তত বাস্তবানুগ হতে থাকলো গেমিংয়ের দৃশ্য, বদলে গেল গেমারদের রুচিও৷ ২০০১ সালের ‘হ্যালো’ গেমটি গ্রাফিক্সের দিক থেকে বেশ সাড়া ফেলেছিল৷ তবে এখনকার গেমারদের কাছে সেটি সেকেলে মনে হবে৷
ছবি: Bungie
গেমিংয়ে মোশন কন্ট্রোল
জাপানি প্রতিষ্ঠান নিনতেনদো ওয়াইফাই কনসোলোর মাধ্যমে গেমিংয়ে আরেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে৷ শুধু তরুণ নয়, বয়স্করাও এর মধ্য দিয়ে ভিডিও গেমিংয়ে আকৃষ্ট হন৷ ফিটনেস আর ড্যান্সধর্মী গেমের বিকাশ ঘটে এর মধ্য দিয়ে৷ নিনতেনদোর দেখানো পথে মোশন কন্ট্রোল গেম বাজারে আনতে শুরু করে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/B. Fava
হাতের মুঠোয় গেম
ইন্টারনেট প্রসারের হাত ধরে আসে ব্রাউজার গেম, যা পরে স্মার্টফোনে অ্যাপধর্মী গেমে রূপ নেয়৷ সাধারণ মানের এই গেমগুলো নতুন করে আবার বাজার মাত করে৷ তার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে বড় বড় প্রতিষ্ঠান৷ সাধারণ মানে গ্রাফিক্স আর সরল প্রকৃতির কারণে সত্যিকারের গেমারদের কাছে অবশ্য সেগুলো আকর্ষণীয় নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
গেমিংয়ে বাস্তবতা
গেম নির্মাতা পোকেমন ২০১৬ সালে বাজারে ছাড়ে ‘পোকেমন গো’৷ বাস্তব আর ভার্চুয়াল দুনিয়ার এক মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে এতে৷ মোবাইলের মাধ্যমে আপনার চারপাশের এলাকাতে ক্ষুদ্রাকৃতির ডিজিটাল দানব খুঁজে তাকে হত্যা করা এই গেমের মিশন৷
ছবি: picture-alliance/ANN
ভার্চুয়াল বাস্তবতা
গেমিংয়ে সবশেষ সংযোজন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি৷ এর মধ্য দিয়ে খেলোয়াড় নিজেকে খুঁজে পাবে ঠিক গেমের দুনিয়াতে৷ বিভিন্ন ‘কনসেপ্ট’ নিয়ে এরই মধ্যে বাজারে এসেছে নতুন এই প্রযুক্তি৷ তবে এর কিছু শারীরিক কুফলও রয়েছে৷ ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর পর অনেকেই অসুস্থ্ বোধ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
11 ছবি1 | 11
তার কথায়, ‘‘কোনোকিছু ওলটপালট হয়ে গেলে প্রকৃতির এমন ব্যবস্থা রয়েছে যার ফলে ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা যায়৷'' তার অনুযোগ, ‘‘আমরা এই ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছি৷ সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো, নম্র, মিতব্যয়ী বা পরিশ্রমী হওয়ার মানে আমরা এখন আর জানি না৷''
রুবিকের সবচেয়ে বিখ্যাত সৃষ্টি এই রুবিক্স কিউব৷ মানুষের ফোকাস বা মনোসংযোগের কথা ভেবেই এটি তৈরি করেন তিনি৷ এর ফলে হাতেনাতে সমস্যা সমাধান করাটা আসলে কী, তা বোঝা সম্ভব৷ তিনি বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মকে ব্যর্থতা সামলাতে শেখানোই হলো শিক্ষার আসল ভূমিকা৷ শুধু অর্থ নয়, আরো অনেক কিছু জীবনে বিনিয়োগ করা উচিত৷ যেমন– মনোযোগ, শক্তি এবং বৌদ্ধিক চেষ্টা৷ এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ভুলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতিটুকু অন্তত নিতে পারবে৷''
ডিজিটাল গেম এবং ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়েও সতর্ক করেন রুবিক৷ শিশুদের ক্ষেত্রে এর ফলে বাস্তব জগতে নিজে নিজে কোনো কিছু শেখার সুযোগ কমে আসছে বলে মনে করেন তিনি৷ তার কথায়, ‘‘ আমি যদি বাস্তব জগতকে শুধুমাত্র ভার্চুয়াল লেন্স দিয়ে দেখি, তাহলে অভিজ্ঞতার ব্যাপারটাই মারাত্মকভাবে কমে যায়৷ নিজে কোনো বই পড়া আর কারো থেকে বইয়ের বিষয়বস্তু জেনে নেয়ার যে ফারাক রয়েছে, এটাও তাই৷ আমরা বাস্তবজগতের সঙ্গে সংযোগ হারাতে শুরু করেছি৷''