1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একাত্তরের শত্রুও কাছে, বন্ধু ভারত আরো কাছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মার্চ ২০২১

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কারো অজানা নয়৷ আর তখন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই তো স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ৷

ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই দুই দেশসহ একাত্তরের সব ‘শত্রু-মিত্রের’ সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা কেমন?

বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দেশগুলোর সাথেও সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ৷ তাই ভারত নয়, চীন এখন বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী৷ তারপরও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন অনেকটাই ভারতমুখী বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক৷

এবার পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে (২৩ মার্চ) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ তিনি কোভিড আক্রান্ত ইমরান খানের সুস্থতাও কামনা করেছেন৷ আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে ২৬ মার্চ, অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসেই আসছেন ঢাকায়৷

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন জাতীয় দিবসে ইমরান খানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই শুভেচ্ছা একটি আনুষ্ঠানিকতা৷ এটা দিয়ে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা নির্ধারণ করা যায় না৷ রিপাবলিক দিবসে এক দেশ আরেক দেশকে শুভেচ্ছা জানায়৷ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হলেও জানায়৷

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো বন্ধু থাকেনা, স্থায়ী কোনো শত্রু থাকেনা: ড. তারেক শামসুর রহমান

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে অ্যামেরিকা, চীন ও সৌদি আরবসহ আরো অনেক মুসলিম দেশ বাংলাদের স্বাধীনতা চায়নি৷ কিন্তু তখন বিশ্ব ছিল দুই ব্লকে বিভক্ত৷ ভারত, রাশিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে৷ কিন্তু এখন বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে৷ বিশ্ব এখন বলতে গেলে এককেন্দ্রিক৷ তাই বাংলাদেশও আর কোনো ব্লকের দিকে নয়, সব রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে চলছে৷

রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক থাকবে না, আবার ভারতের সাথে সম্পর্ক থাকলে চীনের সাথে থাকবে না- সেটা এখন আর হয়না৷ তাই বাংলাদেশ ভারতের সাথেও সম্পর্ক রাখছে, চীনের সাথেও সম্পর্ক রাখছে৷ রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আছে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও সম্পর্ক আছে৷ বাংলাদেশের যে বিনিয়োগ দরকার, অবকাঠামো দরকার সেখানে ভারত তেমন কিছুই দিতে পারবে না৷ তাই চীনকে আমাদের লাগছে৷ কিন্তু ভারতের সাথেও আমাদের সুসম্পর্ক রাখতে হবে৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারত৷ আমাদের দেশের তিন দিকে তাদের অবস্থান৷

বিশ্বরাজনীতি, ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের সাথেও সম্পর্ক রাখছে বাংলাদেশ৷ এখন বিশ্বপরিস্থিতিই এমন যে সবার সাথে সবার সম্পর্ক রাখতে হয়৷

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো বন্ধু থাকে না, স্থায়ী কোনো শত্রু থাকে না৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় চীন আমাদের তীব্র বিরোধিতা করলেও এখন সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী৷ আমার স্বার্থে যাকে প্রয়োজন, তার সঙ্গেই সম্পর্ক করা৷’’

রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় হচ্ছে: মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর এই কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল৷ আর এই কারণেই তিনি ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে কে এম কায়সারকে চীনে পাঠিয়েছিলেন, চীন যাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় তা নিশ্চিত করতে৷ তিনি এটাও উপলব্ধি করেছিলেন যে, ইসলামি বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জরুরি৷ আর সে কারণেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন৷’’

তিনি মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মিলে চীনকে আটকানোর প্রক্রিয়া আছে৷ বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কোনো দিকে না গিয়ে ভারসাম্য বজার রাখার যে অবস্থানে আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে৷ তবে তার মতে, ‘‘ভারত দ্বিপাক্ষিক অনেক সমস্যারই সমাধান করছে না৷ আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ভারত যেন সব সময় বেশি না নিয়ে নেয়৷’’

তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কূটনীতিতে ভারত নির্ভরতা বাড়ছে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক৷ তিনি মনে করেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিদেশ-নীতি বহুপাক্ষিক দিকেই ধাবিত হয়৷ আর সেটাই সঠিক৷ কিন্তু ১০-১২ বছরে আবার যেন বাংলাদেশ ভারত ব্লকভুক্ত হচ্ছে৷ বিশেষ করে গত দুই বছরে ভারতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর হয়ে গেছে বাংলাদেশ৷ তবে তিনি মনে করেন, ‘‘এটা রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় হচ্ছে৷’’ তার প্রশ্ন, ‘‘এখন বাংলাদেশের জন্য ভারতের কন্ট্রিবিউশন কী? তাহলে ভারতের ওপর কেন এই নির্ভরতা?’’

এই সাবেক কূটনীতিক আরো বলেন, ‘‘১৯৭৪ সালে  পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গিয়েছিলেন ভারতকে উপেক্ষা করে৷ তিনি সেই ধরনের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন৷ তিনি দেশের স্বার্থটা দেখেছেন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ