৫৫ শতাংশ ভারতীয় অনলাইনে মত প্রকাশে ‘ভয় পান’
৩০ মার্চ ২০১৯ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয়ে গেছে৷ ১১ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট গ্রহণ৷ এবার ৯০ কোটির বেশি ভারতবাসী এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷ এই সংখ্যাটা অনেক দেশ তো বটেই, মহাদেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি৷ গণতন্ত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ কিন্তু, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে এই স্বাধীনতা অবাধ নয় বলেই দাবি করছে এক সমীক্ষা৷
রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অফ জার্নালিজম সম্প্রতি এই সমীক্ষা চালিয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অর্ধেক ভারতবাসী অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য করতে ভয় পান৷ ৪৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তাঁরা রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ্যে আনলে তাঁদের প্রতি বন্ধু বা পরিজনদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যেতে পারে৷ এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ৫৫ শতাংশ ভারতীয়র বক্তব্য, অনলাইনে রাজনৈতিক মন্তব্য করলে তাঁরা শাসকের কোপে পড়তে পারেন৷
বাধা আছে
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী আতঙ্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে৷ এটা অস্বীকার করা যায় না৷ সেই অর্থে গণতন্ত্র অবাধ নয়৷ সংবিধানের স্বীকৃতি থাকলেও স্বাধীনভাবে মত জানানোর ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে৷ এটা উদার গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়, বিপজ্জনক৷''
তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা শুধু ভারত নয়, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও সত্যি৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বিরোধিতার পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে৷ এই অবস্থার পরিবর্তনে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে৷ সংবাদমাধ্যমকেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে৷''
‘হিন্দুত্ববাদীরা অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে'
অনলাইনে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের ঘটনার নমুনা রয়েছে৷ পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর ইন্টারনেটে মন্তব্য করায় একাধিক জন গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নিজের দেশের বিরোধিতায় কি স্বাধীনতার ব্যবহার করা উচিত? যদিও দেখা যাচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে নয়, রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গে মত প্রকাশের অধিকার সংকুচিত হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে অধ্যাপকের দাবি, সারা দেশে এই ছবিটা আলাদা কিছু নয়৷
অম্বিকেশ মহাপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হিন্দুত্ববাদীরা দেশের সর্বত্র স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে৷ সরকারের সমালোচনা করলেই দেশদ্রোহী তকমা দিচ্ছে৷ ফলে দারিদ্র্য, কর্মহীনতার মতো প্রকৃত ইস্যুগুলি সামনে আসছে না৷ এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা অভিযোগ তুলছেন, সরকার তাঁদের কাজে হস্তক্ষেপ করছে৷ সব ধরনের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শাসকের কোপে পড়ছে৷ সেখানে সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরবে কী করে?''
অধ্যাপকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার চায় না কোনো বিরোধী স্বর থাকুক৷ তৃণমূল কংগ্রেস আদতে বিজেপিরই মিত্রশক্তি৷ তারা একত্রে সরকারও গড়েছিল৷ তবে দুই দলের কিছুটা ভিন্নতা আছে৷''
সার্বিকভাবে অনলাইন সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে নৈরাশ্যের ছবি উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়৷ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সিংহভাগ এখন মোবাইলে খবর পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন৷ পথচলতি মানুষ বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন টাটকা খবরে৷ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াও খবরের উৎস৷ এসব মাধ্যমের খবর কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে?
অনলাইন খবরে অবিশ্বাস
রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অফ জার্নালিজম-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, অর্ধেক ভারতীয় আদৌ অনলাইনের খবরে বিশ্বাস করেন না৷ অনাস্থার তিনটি কারণ উঠে এসেছে, প্রথমত, নিম্নমানের সাংবাদিকতা, দ্বিতীয়ত, ভুয়া খবর এবং তৃতীয়ত, পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ৷ অনলাইনে খবর দেখলেও ৫৭ শতাংশ মানুষ ধন্দে থাকেন তার সত্যতা নিয়ে৷ খবর সত্যি হলেও তা কতটা একপেশে, সেই সংশয়ও থাকে৷ এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়া তথা অনলাইনে পাওয়া খবর এখনো ততটা নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি৷
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সাংবাদিক, একটি নিউজ পোর্টালের পরিচালক শম্ভু সেন অবশ্য অনলাইন খবর মানেই ভুয়া, এটা বিশ্বাস করতে রাজি নন৷ তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খবর সত্য থাকে৷ কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো এটা করে না৷ সাধারণভাবে খবরের হেডিংয়ে একটা চমক তৈরি করা হয় অনলাইন খবরের ক্ষেত্রে৷ যেটা প্রিন্ট মিডিয়ায় হয় না৷ তাই এটাকে মিথ্যে বলা যায় না৷''