দীর্ঘ ছ'বছর বাইরে থাকার পর অবশেষে ঘরে ফিরলেন মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের এই নোবেল বিজয়ীকে নিয়ে উচ্ছসিত গোটা বিশ্ব৷ নিজের দেশে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মালালা৷
বিজ্ঞাপন
গত ছয় বছর তাঁকে অনেক কিছু দিয়েছে৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ, বেস্ট সেলার বই, তাঁর জীবন নিয়ে ডকুমেন্টারি– এমন আরো অনেক কিছু৷ জাতিসংঘে বক্তৃতা করেছেন তিনি৷ বহু দেশ তাঁকে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দিতে চেয়েছে৷ কিন্তু মালালা ইউসুফজাই খুশি হতে পারছিলেন না৷ বহু সাক্ষাৎকারেই তিনি বারংবার একটিই আক্ষেপ করছিলেন– দেশে ফিরতে চান৷ অবশেষে তা সম্ভব হলো৷ ছয় বছর পর নিজের দেশ পাকিস্তানে ফিরলেন মালালা৷ মালালা তো বটেই, খুশি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষরাও খুশি৷
পাকিস্তানের প্রশাসন সূত্রের খবর, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মালালা৷ এছাড়াও বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা৷ তবে নিরাপত্তার কারণে সেসব এখনই জানাতে চাইছে না পাকিস্তান প্রশাসন৷ ছ'বছর পর দেশে ফিরে তাঁকে যাতে কোনো রকম সমস্যার মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে পাক প্রশাসন৷
তালেবান: যাদের কারণে চাপের মুখে পাকিস্তান
ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার অন্যতম কারণ, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের সাহায্য করছে৷ কিন্তু কেন? পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কই বা কী?
ছবি: Majid Saeedi
গোড়ার কথা
১৯৭৮ থেকে ’৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ পাশতুন জনজাতির যোদ্ধারা সে সময় রাশিযার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পরবর্তীকালে তারাই তালেবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ রাশিয়াকে ঠেকাতে সেই সময় পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকা তালেবানকে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Khan
গৃহযুদ্ধ এবং তালেবান
১৯৯২ থেকে ’৯৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ সেই সময় তালেবান ত্রমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ অভিযোগ, তালেবানদের সেই উত্থানেও পাকিস্তান সাহায্য করেছিল৷ বস্তুত, বিস্তীর্ণ আফগানিস্তান জুড়ে তালেবান যে সরকার গঠন করেছিল, কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়নি৷
ছবি: Majid Saeedi
৯/১১ এবং মার্কিন সৈন্য
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল কায়দা হামলা চালানোর পর অ্যামেরিকা আল কায়দা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ আফগানিস্তানে পৌঁছায় মার্কিন সৈন্য৷ আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই সরকারকে সমর্থন জানায় অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যরাও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে শামিল হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাকিস্তানের লাভ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রথম এবং প্রধান শত্রু আফগান তালেবান নয়, ভারত৷ এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ চালানোর জন্য তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানের প্রয়োজন৷ ভারত বহুবার অভিযোগ করেছে যে, সীমান্তে আটক করা জঙ্গিদের সঙ্গে তালিবান যোগ আছে৷ তালিবান পাকিস্তানেই প্রশিক্ষণ নেয় বলেও অভিযোগ করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
অন্য কূটনীতি
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে আফগানিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তানকে পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে ভুগতে হতে পারে৷ তাই তালেবান প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থান নিতে হয় পাকিস্তানকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
পাকিস্তানেও তালেবান হামলা
গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ পাঁচ তারা হোটেল থেকে ভলিবল স্টেডিয়াম, বাজার থেকে সামরিক ঘাঁটি সর্বত্রই হামলা হয়েছে৷ বারবারই আঙুল উঠেছে তালেবানের দিকে৷ অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও পাকিস্তান তালিবানের প্রতি নরম থেকেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মার্কিন হুমকি
ভারতসহ বেশ কিছু দেশ বার বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে৷ এতদিনে অ্যামেরিকা সে অভিযোগে শিলমোহর দিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিলো যে, পাকিস্তানকে তারা আর কোনও সামরিক সহায়তা দেবে না, কারণ, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
7 ছবি1 | 7
দেশ ছাড়ার সময়টা খুব ভালো ছিল না৷ পাকিস্তানের সোয়াট প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মালালা৷ খুব ছোট বয়স থেকেই তিনি সাহসী এবং লড়াকু৷ মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ নিয়ে মাত্র নয় বছর বয়সে মুখ খুলেছিলেন তিনি৷ এর কিছুদিন পর বিবিসি উর্দুর জন্য একটি ব্লগ লিখতে শুরু করেন৷ সেখানে তিনি লেখেন, তালেবান অধ্যুষিত এলাকায় মেয়েদের পড়াশোনা করা ঠিক কতটা কঠিন৷ এছাড়া তাঁর সমাজ নিয়েও বহু সমালোচনামূলক কথা লিখেছিলেন মালালা৷ এর কিছুদিন পরেই স্কুল থেকে ফেরার সময় স্কুল বাসে উঠে পড়ে সশস্ত্র জঙ্গিরা৷ মালালাকে লক্ষ করে একের পর এক গুলি করে তারা৷ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে কার্যত কোমায় চলে যাওয়া মালালাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে৷ বহুদিনের চেষ্টায় আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি৷ পরবর্তীকালেও মেয়েদের পড়াশোনার জন্য লড়াই তিনি চালিয়ে গেছেন৷ স্বীকৃতিও পেয়েছেন৷
পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ মালালার দেশে ফেরা নিয়ে উৎসাহী হলেও একদল এখনো সমালোচনা করে যাচ্ছেন৷ পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক হুমা ইউসুফ লিখেছেন, একশ্রেণির লোকের মালালার বিরুদ্ধে দু'টি অভিযোগ৷ এক, তাঁর বিখ্যাত হয়ে ওঠার কারণ পাকিস্তানের সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনাটিকে ঘিরে৷ ফলে দেশের নাম আসলে উজ্জ্বল নয়, কালিমালিপ্ত করছেন মালালা৷ এবং দুই, মালালা পশ্চিমি অপসংস্কৃতিকে পাকিস্তানে ঢোকাতে চাইছেন৷ যদিও হুমা লিখেছেন, পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষই মালালাকে ভালোবাসেন৷ তাঁরা চান মালালা দেশের মুখ আরো উজ্জ্বল করুন৷