ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ৬ বাংলাদেশি৷ তাঁদের ইন্দোনেশিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ৷ ধরা পড়া বাংলাদেশিরা এখন ইন্দোনেশিয়ার পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার সরকার গত কিছুদিন ধরে জলপথে সীমান্ত অতিক্রম করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ধরে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠাচ্ছে৷ এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে৷
বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ জানায়, নিজেদের জলসীমা থেকে ৮ জনকে ধরে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার টহল পুলিশ৷ ধরা পড়া ৮ জনের মধ্যে ৬ জন বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী, বাকি দু'জন ইন্দোনেশীয় মাঝি৷
ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ আরো জানায়, বাংলাদেশিদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷
ইন্দোনেশীয় দুই মাঝির সহায়তায় ধরা পড়া ৬ জন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করছিল৷ অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে দেয়ার শর্তে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ৭ হাজার ডলার গ্রহণ করেছিল বলেও পুলিশকে জানিয়েছে ধরা পড়া দুই ইন্দোনেশীয়৷
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ধরে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্দোনেশিয়া৷ সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা এমন উদ্যোগ, বিশেষ করে পানিতে এমন উদ্যোগকে সমর্থন করি না৷ এ ধরনের উদ্যোগ বিপদ ডেকে আনতে পারে৷''
ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের জীবন
সাগরে মানব পাচারকারীদের অত্যাচার সহ্য করে, দীর্ঘদিন অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে, অবশেষে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন তাঁরা৷ আচেহ রাজ্যে পৌঁছানো রোহিঙ্গা এবং দরিদ্র বাংলাদেশিদের জীবন কীভাবে কাটছে সেখানে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/Beawiharta
নাম, পরিচয় লেখানো
ইন্দোনেশিয়ার জুলক গ্রামে পৌঁছানোর পরই তাঁদের লাইনে দাঁড়াতে হলো৷ নাম, ঠিকানা সব লিখিয়ে তবেই নিস্তার৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
রোগযন্ত্রণা
কুটা বিনজের জুলোক গ্রামে অনেকে এসেছেন হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে৷ এতদিন সাগরে ভেসেছেন নামমাত্র খেয়ে আর মানব পাচারকারীদের অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে৷ স্থলে পৌঁছানোর আগেই নানা ধরণের অসুখে আক্রান্ত তাঁরা৷ শয্যাশায়ী একজনকে কোলে নিয়েছেন একজন, পাশেই আরেকজন তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন গলায় একটু পানি ঢেলে৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
শান্তি
নৌযানে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে এতদিন৷ ভালো করে বসে একটু বিশ্রাম নেয়ারই উপায় ছিল না, আরাম করে নাওয়া-খাওয়া তো দূরের কথা৷ ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে একটা বাথটাবের দেখা পেতেই তাই গোসল শুরু করলেন কয়েকজন৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
ক্ষুধার্ত শিশু
এক শিশুর হাতে বিস্কুট তুলে দিচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার এক স্বেচ্ছাসেবী৷ খুব কাছ থেকে বিস্কুটের দিকে তাকিয়ে আছে আরেক শিশু৷ চোখই বলছে, অনেকদিন পর ভালো খাবারের দেখা পেয়েছে শিশুটি!
ছবি: Reuters/Beawiharta
শান্তির বারি
তৃষ্ণার্ত সন্তানের মুখে মায়ের হাতের পানি৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা
কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এক নারী৷ ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হলো দুজনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
6 ছবি1 | 6
তবে অস্ট্রেলিয়া মনে করে, তাদের বর্তমান অভিবাসন নীতি বাস্তবসম্মত৷ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রী পিটার ডাটন বলেছেন, ইউরোপের বর্তমান অবস্থা দেখেই ধারণা করা যায় জলপথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উৎসাহিত না করা কতটা দরকার৷
সাম্প্রতিক সময়ে, জলপথে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর হার কমে যাওয়ার বিষয়টির দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি৷
২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যায় ১২০০ মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে এমন মৃত্যু অনেক কমেছে৷
এক মুসলিম প্রধান দেশে মানুষ, পাহাড় ও সমুদ্র
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়া৷ সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এই দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে৷ রনি জাকারিয়ার সাদা-কালো ছবিগুলো দেখলে বোঝা যাবে ইন্দোনেশীয়দের জীবন, মননও কতটা প্রকৃতিকেন্দ্রিক৷
ছবি: Rony Zakaria
পাহাড়ে পূজা
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে পূর্ব জাভার তিনটি পাহাড়৷ পাহাড় তিনটির নাম ব্রোমো, বাটক ও সেমেরু৷ প্রতিবছর টেনগার জনগোষ্ঠীর মানুষদের ধর্মীয় উৎসব হয় এখানে৷ টেনগাররা প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ প্রতি বছর ব্রোমো পাহাড়ে গিয়ে তাঁরা চাল, ফল-মূল এবং ঘরের অন্য কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু অর্পণ করে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন৷ টেনগার জনগোষ্ঠীর মানুষদের বিশ্বাস, দেবী খুশি হলে তাঁদের জীবনে সুখ-সাচ্ছন্দ্য আসবে৷
ছবি: Rony Zakaria
পায়ের নীচে আগ্নেয়গিরি
আগ্নেয়গিরির দেশও ইন্দোনেশিয়া৷ অনেক পাহাড়ই আসলে আবৃত বা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি৷ এই পর্বতারোহী যে পাহাড়টির চূড়ায় দাঁড়িয়ে, তার নাম মাউন্ট মেরাপি৷ ২ হাজার ৯৯৮ মিটার উঁচু এই পাহাড়টিও একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি৷ এই পাহাড়ে এ পর্যন্ত ৮০ বার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে৷ সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতটি হয়েছিল ২০০৬ সালে৷
ছবি: Rony Zakaria
ঝর্ণার পবিত্রতা
এক পাহাড় থেকে নামছে জলের ধারা৷ ইন্দোনেশিয়ার টেনগারাস জনগোষ্ঠীর হিন্দুদের কাছে এই ঝর্ণার জল খুব পবিত্র৷ তাই পূজারিরা এসেছেন পবিত্র জল সংগ্রহ করতে৷
ছবি: Rony Zakaria
সমুদ্রে ‘দক্ষিণের রানি’, গোধুলীলগ্নে সূর্যস্নান
পারাংট্রিটিস সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়৷ সূর্য ডোবার ঠিক আগে, অর্থাৎ গোধুলিতে সূর্যের মৃদুমন্দ আলোয় তাঁরা সাগরজলে গোসল করছেন৷ কারো গায়েই কিন্তু সবুজ পোশাক নেই, কারণ, স্থানীয়দের বিশ্বাস, পারাংট্রিটিসে ‘নেয়াই রোরো কিডুল’, অর্থাৎ ‘দক্ষিণের রানি’ আছেন৷ রানি বড় ভয়ংকর৷ সবুজ পোশাক পরা কাউকে পেলেই রানি নাকি তাঁকে গভীর জলে টেনে নেন!
ছবি: Rony Zakaria
সমুদ্রে প্রার্থনা
যোগ্যকর্তা অঞ্চলের পারাংট্রিটিস সমুদ্রসৈকতে পালিত হয় ‘লাবুহান আলিত’ নামের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান৷ স্থানীয়রা এখানে এসে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি, চাকরি ও প্রেমে সাফল্য কিংবা হারানো স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আশাসহ জাগতিক অনেক প্রয়োজন মেটানোর জন্যই প্রার্থনা করেন৷
ছবি: Rony Zakaria
শুদ্ধির প্রয়াস
বালি দ্বীপের বাতুবোলোং সৈকতে অনেকেই যান নিজেকে পবিত্র বা শুদ্ধ করে নেয়ার আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে৷ ছবির এই তরুণ একটি মুখোশ নিয়ে এসেছেন৷ সপ্তাহ খানেক আগেও মুখোশটি ছিল স্বর্ণ ও মুক্তাখচিত৷ কিন্তু চোর সব সোনা ও মুক্তা চুরি করেছে৷ স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, খারাপ কাজের চিহ্ন বা স্মৃতি না রাখা ভালো৷ তাই তরুণটি এসেছে চোরের হাতে সোনা, মুক্তা খোয়ানো মুখোশটিকে সমুদ্রে বিসর্জন দিতে৷
ছবি: Rony Zakaria
জেলেদের নৌকা মিছিল ও ‘উপহার’
ইন্দোনেশিয়ার মানুষদের ধর্ম, সংস্কৃতি, মননে পাহাড় ও সাগরের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে জেলেদের নৌকা মিছিল৷ প্রতি বছর এমন মিছিল করে এসে সমুদ্রে বিভিন্ন ধরণের খাবার অর্পণ করে ‘সেডাকাহ লাউট’ উৎসব পালন করেন তাঁরা৷ এই খাবার আসলে ঈশ্বরের জন্য বিশেষ উপহার৷ জেলেরা বিশ্বাস করেন এমন উপহার পেলে সৃষ্টিকর্তা খুশি হবেন এবং খুশি হয়ে তিনি আগামীতে আরো ভালো মাছ ধরার মৌসুম উপহার দেবেন৷