৭০ বছর হলো বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর
১৭ জানুয়ারি ২০১২ ১৯৪২ সালের ১৭ই জানুয়ারি অ্যামেরিকার কেনটাকি রাজ্যের লুইভিলে জন্ম ক্যাসিয়াস ক্লের৷ ১৯৬৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নামও বদলে ফেলেন৷ তখন থেকেই তিনি মোহাম্মদ আলী নামে পরিচিত৷
১৯৬৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার মুষ্টিযুদ্ধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব অর্জন করেন৷ এরপর ১৯৬৭ সালে আলীকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয় মার্কিন সরকার কিন্তু মোহাম্মদ আলী তা সরাসরি প্রত্যাখান করেন৷ কারণ হিসেবে তিনি জানান, তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে৷ একই সঙ্গে কোন ধরণের ভয় না করেই তিনি বলেন ,‘কোন ভিয়েতনামি আমাকে কোনদিন ‘‘নিগার’’ বলে গালি দেয়নি৷ আমি কোন অবস্থাতেই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করবো না৷’ সেই সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে জনমত তৈরি হচ্ছিল৷ মোহাম্মদ আলীর এই মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করে৷ যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনে, সাদা কালোর বৈষম্য দূর করতে মোহাম্মদ আলীও ভূমিকা রাখেন৷ সাধারণ মানুষের অনেক কাছে চলে আসেন তিনি৷ অনেকের অনুপ্রেণার উৎস হন মোহাম্মদ আলী৷ শুধু বক্সার হিসেবেই নিজেকে রিং-এর মধ্যে আটকে রাখেননি তিনি৷ তার ভেতরেও একজন মানুষ আছে, যে বেঁচে থাকার অধিকারে বিশ্বাসী – তার প্রমাণ তিনি দিয়েছিলেন৷
মোহাম্মদ আলীকে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট’ নামে ডেকেছেন অনেকে৷ বক্সিং জগতে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন৷ তিনি যাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তাদের মধ্যে জো ফ্রেজিয়ার এবং জর্জ ফোরম্যান উল্লেখযোগ্য৷ রিং-এর ভেতর মোহাম্মদ আলীর নিজস্ব টেকনিক ছিল৷ তার মধ্যে আলী শাফল এবং রোপ-আ-ডোপ উল্লেখযোগ্য৷ বক্সিং-এর মধ্যে দিয়েই বিশ্বের সেরা ক্রীড়াবিদদের একজন হয়ে ওঠেন মোহাম্মদ আলী৷ অ্যাঞ্জেলো ডান্ডি ছিলেন তাঁর ট্রেনার৷
কীভাবে বক্সিং জগতে এলেন?
মোহাম্মদ আলীর বয়স যখন মাত্র ১২ তখন একবার তার সাইকেল চুরি হয়ে গিয়েছিল৷ চোর ধরাও পড়েছিল৷ পুলিশের কাছে মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, চোরটিকে ইচ্ছেমত ‘ঘুষি’ মারতে চান তিনি৷ তখন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বলেছিল,‘তাহলে তো আগে ঘুষি মারা শিখতে হবে, মুষ্টিযোদ্ধা হতে হবে৷’ যেই ভাবা সেই কাজ৷ এরপরই আলী ট্রেনিং নিতে শুরু করেন বিখ্যাত বক্সার চাক বোডাকের কাছ থেকে৷
মোহাম্মদ আলী অল্প বয়সেই কেনটাকিতে ছয় বার গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছেন, দুবার জাতীয় গোল্ডেন গ্লাভস, অ্যামেচার অ্যাথলেটিক ইউনিয়ন ন্যাশনাল টাইটেল এবং ১৯৬০ সালে রোমের অলিম্পিকে পান লাইট হেভিওয়েট গোল্ড মেডেল৷ অলিম্পিক থেকে ফিরেই তিনি শুরু করেন তার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার৷ ছয় ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন ক্ষিপ্রগতিতে৷ হয়ে ওঠেন বিশ্বের সেরা ক্রীড়াবিদদের একজন৷
তিনবার মুষ্টিযুদ্ধ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী৷ আর কেউ তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি৷ ১৯৯৯ সালে স্পোর্ট্স ইলাসট্রেটেড ম্যাগাজিন মোহাম্মদ আলীকে স্পোর্ট্সম্যান অফ দ্যা সেঞ্চুরি টাইটেল দেয়৷ একই বছরে বিবিসি স্পোর্ট্স পার্সোনালিটি অফ দ্যা সেঞ্চুরি উপাধিতে ভূষিত করে মোহাম্মদ আলীকে৷ ১৯৯৬ সালের আটালান্টা সামার অলিম্পিকের মশাল জ্বালানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মোহাম্মদ আলীকে৷ আনন্দের সঙ্গেই তিনি তা করেছিলেন৷
কিন্তু এই বক্সার এখনো যেন এক ‘বড় শিশু' রয়ে গেছেন৷ মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী লোনি আলী সাংবাদিকদের জানান,‘‘আলী একেবারে শিশুর মত৷ আলী জন্মদিন পালন, উৎসব এসব খুবই পছন্দ করে৷ বেশ ঘটা করেই আলীর ৭০ জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে৷''
লোনি আলী আরো জানান, সব মিলে পাঁচটি জন্মদিন পার্টির আয়োজন করা হয়েছে৷ এবং এই পার্টিগুলো চলবে আগামী কয়েকমাস পর্যন্ত৷ পার্টিগুলো হবে লাস ভেগাস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং অ্যারিজোনায়৷ লুইসভিলে শনিবার জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের ট্রেনার অ্যাঞ্জেলো ডান্ডি৷ পার্টিতে আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে এক হাজার ডলার করে নেয়া হচ্ছে৷ সেই অর্থ দিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হবে৷ তৈরি করা হবে একটি মিউজিয়াম যেখানে মোহাম্মদ আলীর জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলা হবে, বক্সার হিসেবে মোহাম্মদ আলীর জীবনকে তুলে ধরা হবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়াদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক