৭৩ বহিষ্কৃত নেতা বিএনপির, নাকি ‘শেখ হাসিনার মতাদর্শের’?
হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৭ এপ্রিল ২০২৪
উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের ৭৩ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি৷
তৃণমূল পর্যায়ের ৭৩ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: Rashed Mortuza/DW
বিজ্ঞাপন
বহিষ্কৃতরা মনে করেন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়া জরুরি৷ তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন ভিন্ন কথা৷
বহিস্কৃত ৭৩ জনের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদও থাকবে না৷
বৃহস্পতিবার বিকেলে যাদের কাছে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয় তাদের মধ্যে ২৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী৷
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা নিজেদের স্বার্থে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেনভ তারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন৷’’
ওই ৭৩ জনের মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন৷ তাদের বহিস্কারের আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়৷ সেই নোটিশের জবাব দেননি অনেকে৷ আবার কেউ কেউ নোটিশ পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেছেন৷ নোটিশ দেয়ার পর তৃণমূলের এই নেতাদের সঙ্গে রুহুল কবির রিজভী এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কথাও বলেছেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৭৩ জন প্রার্থী হিসেবে থেকে গেছেন৷
রহুল কবির রিজভীর সই করা বহিষ্কারের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো৷’’ এর আগে শোকজের টিঠিতে তারা দলের সঙ্গে ‘বেঈমানি' করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় বলে নোটিশপ্রাপ্তরা ডয়চে ভেলেকে জানান৷
তারা নিজেদের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন: রুহুল কবির রিজভী
This browser does not support the audio element.
৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ টি উপজেলায় নির্বাচন হবে৷ এবার নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক থাকছে না৷
যা বলছেন বহিষ্কৃতরা
কিশোরগগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল আলম দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন৷ শোকজের পর মৌখিকভাবেও বারণ করা হয়েছে তাকে, তারপরও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি৷ তাকে দল থেকে বহিষ্কারের কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, ‘‘দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি জালিয়াতির নির্বাচনে অংশ নেবে না৷ আপনি সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন৷'' এর জবাবে নাজমুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি দলের সঙ্গে কোনো বেঈমানি করিনি৷ আমি তো সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি৷ তাই তাদের জন্য নির্বাচন করছি৷ তারা যদি আমাকে গ্রহণ করে, তাহলেও তাদের সঙ্গে থাকবো৷ না করলেও তাদের সঙ্গে থাকবো৷’’
তার কথা, ‘‘আমি তো জাতীয় পর্যায়ের নেতা না, তৃণমূলের নেতা৷ তাই আমাকে তৃণমুলে থাকতে হবে৷ আমি যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি, তাহলেই আমি নেতা৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকলে তো আর দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয় না৷’’
তার কথা, ‘‘বহিষ্কার করা হলেও আমি একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে দলের সঙ্গেই থাকবো৷’’
তার মতে, ‘‘এবার নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না তাই বিএনপি যদি নির্দলীয় প্রতীকে দলের লোকজনকে নির্বাচনে বাধা না দিতো, তাহলে তৃণমূলের আরো অনেক নেতা প্রার্থী হতেন৷ এতে দলের লাভ হতো৷ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও চাঙ্গা হতো৷ আমার এলাকার নেতা-কর্মীরা এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে৷’’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুর রশীদ মজনু ওই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সদস্যও ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানকার বিএনপি নেতাদের অবহেলার শিকার৷ আমি বটতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম মোট ১৪ বছর৷ কিন্তু আর আগে উপজেলা বা সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি৷ বিএনপির বড় কোনো পদও আমাকে দেয়া হয়নি৷ কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে৷ তারা আমাকে চায়৷ তাই আমি প্রার্থী হয়েছি৷’’
তার কথা, ‘‘আমরা নির্বাচন না করলে দলের ক্ষতি হবে৷ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে৷ আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে৷ আরো হবে৷ আমরা যদি জনপ্রতিনিধি হই তাহলে সেইসব মামলা ফেস করা সহজ হবে৷ আর নির্বাচন না করলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সব আওয়ামী লীগে চলে যাবে৷ গত সংসদ নির্বাচনে অনেকেই আওয়ামী লীগে চলে গেছে৷ তৃণমূলে দলকে ধরে রাখতে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা উচিত৷’’
আমি এখানকার বিএনপি নেতাদের অবহেলার শিকার: শামসুর রশীদ মজনু
This browser does not support the audio element.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ওমরাও খান উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী৷ তিনি এর আগে ২৪ বছর কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ তার কথা, ‘‘আমি নির্বাচন করায় বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, উল্টো লাভবান হবে৷ কারণ, আমি তো কাজ করছি মানুষের জন্য৷ তাদের নিয়েই আমার রাজনীতি৷ এখন নির্বাচনে আমার এলাকার মানুষ আমাকে চায়৷ তাদের তো আমরা মূল্যায়ন করতে হবে৷ এর ফলে আমার এলাকায় বিএনপি আরো শক্তিশালী হবে৷ আর নির্বাচন তো দলীয়ভাবে হচ্ছে না৷ আমি না দাঁড়ালে ভোটাররা মন্দের ভালোকে ভোট দিতেন৷ এখন সর্বোত্তম প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন৷’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে আমি মনে করি না৷ এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পেরেছে৷’’
‘‘আর দল থেকে বহিষ্কার করলেও আমি বিএনপির সঙ্গেই আছি৷ বিএনপির সঙ্গেই থাকবো,’’ বলেন তিনি৷
রুহুল কবির রিজভীর বিশ্লেষণ
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘তারা যে যুক্তিই দেখাক না কেন আসলে তারা নিজেদের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন৷ তারা দেশ, মানুষ বা দলের কথা চিন্তা করেননি৷ তারা শেখ হাসিনার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যে, নির্বাচনে না থাকলে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন৷ ডিক্টেটররা এই ধরনের কথা বলে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে৷ তারপর তারা তাদের ছক অনুযায়ী কাজ করে৷ যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবাহী৷’’
তার কথা, ‘‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না৷ ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এ আমরা সেটা দেখেছি৷ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি৷ সাধারণ মানুষও বর্জন করেছে৷ তারা ভোট দিতে যাননি৷ দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে৷ তারপরও কিছু অতি উৎসাহী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে যায়৷ তাদের আমরা বহিস্কার করেছি৷’’
বাংলাদেশে ১২ সংসদ: সরকার, বিরোধী ও গণতন্ত্র
কখনো সংসদে নেই বিরোধী দল, কখনো নেই নির্বাচনেই। কখনো নামকাওয়াস্তে বিরোধী দল, কখনো একই দল বিরোধী এবং সরকারের ভূমিকায়। নির্বাচনে নানা ধরনের নাটকীয়তার তথ্য জানুন ছবিঘরে।
ছবি: AFP
১৯৭৩: প্রথম সংসদে ছিল না বিরোধী নেতা
৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে জয় পায় আওয়ীমী লীগ। জাসদ একটি, জাতীয় লীগ একটি এবং স্বতন্ত্ররা পান পাঁচটি আসন। ভোট পড়েছিল ৫৪.৯। উল্লেখযোগ্য আসন না থাকায় ছিলেন না কোনো বিরোধী দলীয় নেতা। সেই সময় সাতজন সংসদ সদস্য বিরোধী দল গঠনের দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। আড়াই বছর পর সংসদ ভেঙে দিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়, গঠন করা হয় একক দল বাকশাল।
৫১.৩% ভোটার উপস্থিতিতে নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে গঠিত বিএনপি ২০৭ আসন জিতে সরকার গঠন করে। ৫৪ আসন জিতে আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান নেয়, দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান খান হন বিরোধী নেতা। মুসলিম লীগ ২০টি, জাসদ ৮টি এবং অন্যান্য দল পায় ১০টি আসন। ১৯৮১ সালে সেনা কর্মকর্তাদের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের মার্চের পর দ্বিতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়, ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
ছবি: imago/Belga
১৯৮৬: বিএনপির বর্জন, বিরোধী আওয়ামী লীগ
নিজের দল জাতীয় পার্টি গঠন করে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১.১%। আন্দোলনের মুখে ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন এরশাদ।
ছবি: imago/Xinhua
১৯৮৮: প্রধান বিরোধীদের বর্জন, সম্মিলিত বিরোধী দল
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ প্রায় সবকয়টি প্রধান বিরোধী দল এরশাদের অধীনে নির্বাচন বয়কট করে। জাতীয় পার্টি পায় ২৫১টি আসন। বেশ কয়েকটি নতুন তৈরি হওয়া দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসা সংসদ সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় ১৯ সদস্যের সম্মিলিত বিরোধী দল। কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি-কপ নামের ওই বিরোধী দলের নেতা করা হয় আ স ম আবদুর রবকে। নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫২.৫%।
ছবি: bdnews24.com
১৯৯১: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন
ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন এরশাদ। সংবিধানে তখনও ছিল না নিরপেক্ষ সরকারের বিধান। কিন্তু সব দলের সম্মতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয় নির্বাচন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয় লাভ করে ১৪২ আসনে, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়, বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫.৪%। এছাড়া, জাতীয় পার্টি ৩৫ এবং জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিল ১৮টি আসন।
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
১৯৯৬: আবার বর্জন, বিরোধী নেতা বঙ্গবন্ধুর খুনি
এই নির্বাচন বেশি পরিচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নামেই। অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনটি বর্জন করে, ভোটদানের হার ছিল মাত্র ২১%। বিএনপি জিতেছিল ২৭৮ আসনে। ফ্রিডম পার্টির হয়ে একটি আসন জিতেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ৷ স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছিলেন ১০ আসনে। বাকি ১১টির মধ্যে ১০টি আসনের ফলাফল ‘অসমাপ্ত' থাকে ও আদালতের রায়ে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ছবি: Getty Images
১৯৯৬: তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন
আগের সংসদ টিকেছিল মাত্র ১১ দিন। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে ১২ জুন দেয়া হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৪৬ আসনে জেতে আওয়ামী লীগ, ১১৬ আসন পায় বিএনপি। ৩২ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলের নেতা হন খালেদা জিয়া।
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
২০০১: জোটের নির্বাচনে বিএনপি
এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। ১৯৯৯ সালেই জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। এরশাদ জোট ত্যাগ করলেও নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টির একটি অংশ থেকে যায় জোটে। বিএনপি একাই ১৯৩ আসনে জয় পায়, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি এবং জামায়াত পায় ১৭ আসন। আওয়ামী লীগ পায় ৬২ আসন। বিএনপির সঙ্গে সরকারে যোগ দিয়েছিল জামায়াত।
সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ায় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী, গঠিত হয় সেনাসমর্থিত সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে, অভিযোগ ওঠে এই দুই নেতাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০, জাতীয় পার্টি পায় ২৭ আসন। চার দলীয় জোটে বিএনপি পায় ৩০ আসন।
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা
বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায় ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন নিশ্চিত ছিল আওয়ামী লীগের। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পায় ৩৪ আসন। এই সংসদে জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে ছিল বিরোধী দল এবং সরকারে। রওশন এরশাদ হন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রিসভায় ছিলেন তার দলেরই তিন জন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
২০১৮: বিএনপির অংশগ্রহণ, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ
বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করা হয়। এরশাদ বারবার মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরোধী নেতা ছিলেন এরশাদ, এরপর তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।
২০২৪: ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এত স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনো নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগ জিতেছে ২২২ আসন, স্বতন্ত্ররা ৬২ আসন এবং জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১ আসনে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জন করা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়াই করে জয়ী হওয়াদের বেশিরভাগই বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা। দুটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এবারও জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে, নাকি স্বতন্ত্ররাই জোট করবেন তা এখনো জানা যায়নি।