ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ৭৬ শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তার প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ তাদের দুই লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়৷ ওষুধ আইনে এটি সর্বোচ্চ দণ্ড৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় ২১ বছর আগে ১৯৯৩ সালে সারাদেশে এই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷
তবে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রেজাউল রোমেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, অপরাধের তুলনায় এই শাস্তি নগণ্য৷ সঠিক আইনে মামলা করা হলে হত্যার দায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারত৷
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদিন
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি ফেসবুক প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে৷ এই প্রকল্প যাদের কাজে আসতে পারে, তাদের দেখতে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রি মুস্তাফিজ মামুন৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখি আমরাও৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল
ঢাকার মিরপুরে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে ব্রেইলে লিখছে এক শিক্ষার্থী৷ ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে এখন শিক্ষা নিচ্ছে ৮০ জনেরও বেশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শিক্ষকরাও কেউ কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি৷ প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এ স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান চলে৷ এ স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল পড়া
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের এক শিক্ষার্থী ব্রেইলে পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্রেইল বইয়ের অভাব
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দুই শিক্ষার্থী মিলে একটি একটি ব্রেইল বই পড়ছেন৷ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে বইয়ের অভাব অনেক বেশি৷ সহজলভ্য না হওয়ায় বেশিরভাগ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাই বইয়ের সংকটে থাকেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমায়রা মিম (বাঁ থেকে চতুর্থ)৷ তার ক্লাসের সব বন্ধুরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী৷ এ স্কুলে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম থাকায় স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মিম পড়াশুনা করছে এখানে৷ ক্লাসের সব বন্ধরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ওদের সঙ্গে পড়াশুনা করতে ভালোই লাগে তার৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া নমিতা
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের শিক্ষিকা নমিতা৷ স্বাভাবিক চোখ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি৷ স্কুলে পড়ার সময় বখাটেদের ছোঁড়া অ্যাসিডে ঝলসে যায় মুখ, হারান চোখও৷ এরপরেও থামেনি তার পথ চলা৷ লেখাপড়া শেষ করে এখন তিনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শেখানো হয় হাতের কাজও
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি শেখানো হয় হাতের কাজও৷ শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহ নিয়ে এসব কাজ শেখেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ফিজিওথেরাপি
ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীকে ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন এক চিকিৎসক৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই শারীরিক কিছু সমস্যা থাকে, যেগুলো এই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
হোস্টেলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা
স্কুল শেষে হোস্টেলে ফিরছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা৷ ব্যাপ্টিস্ট মিশন স্কুলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই আবাসিক৷ স্কুলের অ্যাকাডেমিক ভবনের পাশেই লাগোয়া একটি ভবনে থাকার জায়গা এই সব শিক্ষার্থীদের৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি অনলাইন প্রকল্প ‘বাংলা ব্রেইল’ চলতি বছর দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে৷ ফেসবুকভিত্তিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও বুক এবং ব্রেইল বইয়ের ইউনিকোড সংস্করণ তৈরির কাজ চলছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
10 ছবি1 | 10
১৯৯৩ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ কোম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারা দেশে ৭৬ জন শিশু মারা যায়৷ এ ঘটনায় ওই বছরই ড্রাগ আইনে ওষুধ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল খায়ের বাদী হয়ে মামলা করেন৷ মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৪ সালে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়৷ দীর্ঘ সময় ধরে মামলার শুনানি এবং যুক্তি-তর্ক শেষে মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আবদুর রশীদ রায় দেন৷
রায়ে ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক চিকিৎসক হেলেন পাশা, ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নগেন্দ্র নাথ বালাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ ও দুই লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়৷ এর মধ্যে প্রথম দু'জন জামিনে রয়েছেন৷ তৃতীয়জন পলাতক৷ জামিনে থাকা দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে৷ মামলায় অ্যাডফ্লেমের মালিক আজফার পাশা ও মান নিয়ন্ত্রক আরেক কর্মকর্তা মো. নোমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত৷ মামলার প্রধান আসামি ও কোম্পানির পরিচালক আনোয়ার পাশা তদন্ত চলাকালেই মারা যান৷ পরে তাঁর নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়৷
১৯৯৩ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি ধরা পড়ে৷ মামলায় বলা হয়, অ্যাডফ্লেমের প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদান থাকায় বহু শিশু কিডনি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৭৬ জনের মৃত্যু হয়৷
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন চারজন৷ মামলা পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর নাদিম মোস্তফা৷ অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ৷
আদালত বলেন, আসামিরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে৷ তাই তাদের ড্রাগ আইনে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছে৷
বিষধর ওষুধ
বিষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের প্রাণনাশক হতে পারে৷ কিন্তু কথায় বলে বিষে বিষ ক্ষয়৷ তাইতো সাপ, বিছা কিংবা মাকড়সার মত বিষধর প্রাণীর বিষ থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়৷
ছবি: San Diego Shooter/nc/nd
বিষ থেকে হৃদরোগের ওষুধ
অস্ট্রেলিয়ার এই সাপটি সবচেয়ে বিষধর সাপ বলে ধারণা করা হয়৷ অথচ এই সাপের বিষ হৃদরোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিছা বেশ কাজের
কাকড়া বিছার বিষ ভয়াবহ এবং এই বিষে মানুষের মৃত্যু হতে পারে৷ কিন্তু এর বিষ ব্যথা কমানোর ওষুধে এবং হৃদরোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: Fotolia/scorpsnakes
মাকড়সা থেকে ওষুধ
এই বিষধর মাকড়সার দেখা মেলে চিলিতে৷ আর হৃদরোগ উপশমে ব্যবহার করা হয় এটিকে৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটির বিষ বন্ধ্যাত্ব দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Pedro Avaria
বাতের ব্যথা সারায় মৌমাছির হুল
বাতের ব্যথা কমাতে ‘মৌমাছির হুল’ চিকিৎসা করা হয়৷ দেহের যে স্থানে ব্যথা থাকে সেখানে হুল ফোটানো হয়৷ চিকিৎসার এই ধরন প্রায় তিন হাজার বছরের পুরানো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলজাইমারের চিকিৎসা
বিজ্ঞানীরা বলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় হলুদ রংয়ের এই সাপের বিষ স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে৷ অর্থাৎ আলজাইমারের ক্ষেত্রে এই সাপের বিষ অত্যন্ত ভালো ওষুধ৷
ছবি: San Diego Shooter/nc/nd
বেদনানাশক শামুক
শামুকের মুখ থেকে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের হয়৷ এটি বেদনানাশক ওষুধে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: picture-alliance
কোবরার বিষ
গলায় কালো রংয়ের এই কোবরা বা কেউটে সাপের বৈশিষ্ট্য হল, এরা ফনা তুলে বাতাসে বিষ ছোড়ে৷ এর বিষ অত্যন্ত মারাত্মক৷ কিন্তু এই বিষই অনেক রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহুমূত্র রোগের চিকিৎসা
এই প্রজাতির টিকটিকির বিষ ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়৷ এর লালায় বিশেষ ধরনের একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে৷
ছবি: Fotolia/www.bitis.de
8 ছবি1 | 8
কিন্তু অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রেজাউল রোমেল ডয়চে ভেলেকে বলেন ৭৬ শিশুর মৃত্যু নিঃসন্দেহে হত্যাকাণ্ড৷ তাই আসামিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত ফৌজদারি আইনে হত্যা মামলা দায়ের করা উচিত ছিল৷ তাহলে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারত৷ তাদের অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য৷ কিন্তু ড্রাগ আইনে মামলা হওয়ায় তাদের মাত্র ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷ কারণ এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তিই হলো ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ তিনি বলেন পুলিশ চাইলে তদন্ত পর্যায়েও মামলার ধারা পরিবর্তন করে হত্যার অভিযোগে চার্জশিট দিতে পারত৷ কিন্তু তা করা হয়নি, যা দুঃখজনক৷
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন ড্রাগ আইনটি এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে৷ নকল বা ভেজাল ওষুধে কারুর মৃত্যু হলে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করেন তিনি৷
মামলার রায়ের সময় লায়লা বেগম নামে একজন মা তাঁর ঘটনার সময় দেড় বছরের শিশু আরিফের ছবি নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ আরিফ ঐ সিরাপ খেয়ে মারা যায়৷ এখন সে বেঁচে থাকলে ২২ বছরের যুবক হত৷ তার ছবি নিয়ে আদালত এলাকায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়৷