আগামী ৭ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকবেন প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদার। কলকাতার স্থানীয় আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের থেকে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় এবং বেআইনিভাবে ভারতে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে শুক্রবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটের নগর দায়রা আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক তাদের ৭ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনে তাদের জেরা করতে পারবেন বলেও বিচারক জানিয়েছেন।
ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''পি কে হালদারের কার্যকলাপ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন তথ্য হাতে আসছে।''
আইনজীবীর দাবি, তদন্তে দেখা গেছে, ''পি কে হালদার প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন। তার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির কথা জানা গেছে। কিন্তু তিনি কোনো আয়ের উৎসের কথা জানাতে পারেননি। এই বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত চলছে।''
পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধার ‘অবৈধ’ সম্পত্তি
শনিবার পশ্চিমঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশের অর্থপাচার মামলার আসামি পি কে হালদার৷ এর আগে তার ও তার সহযোগীদের সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Satyajit Shaw
সুকুমার মৃধার বাড়ির সন্ধানে
শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বা পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার সম্পত্তির সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ শুরুতে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের এই বাড়িতে হানা দেয় তারা৷
ছবি: Satyajit Shaw
সিলগালা
তল্লাশির পর তিনতলা বাড়িটি সিলগালা করে দেয় ইডি৷ ফটকে লাগিয়ে দেয়া হয় নোটিশ৷ তাতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন ২০০২ এর আলোকে বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে৷ তাই সেখান থেকে কোনো সম্পত্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা অনুমতি ছাড়া সরাতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না কেউ৷
ছবি: Satyajit Shaw
দ্বিতীয় বাড়ির খোঁজ
অশোকনগরে সুকুমার মৃধার আরো একটি বাড়ির খোঁজ মেলে৷ সেখানেও তল্লাশি চালায় ইডি৷ তিনি বাংলাদেশের পলাতক আসামি পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন৷ পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের করা অর্থ পাচারের মামলায় গত বছর সুকুমার ও তার মেয়ে গ্রপ্তার হন৷ তখন থেকেই তারা বাংলাদেশের কারাগারে আছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw
তল্লাশি স্বজনদের বাড়িতেও
সুকুমার মৃধার কয়েকটি বাড়ি পরই তার আত্মীয় প্রণব হালদারের বাড়ি৷ সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি৷ তবে প্রণব হালদার ও তার পরিবার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন সুকুমার মৃধার ব্যবসার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা তাদের নেই৷ তল্লাশির মাধ্যমে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন৷
বাংলাদেশের পেশায় আয়কর আইনজীবী হলেও পশ্চিমবঙ্গে তিনি মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত৷ বিভিন্ন স্থানের তার মাছের ভেড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ অশোকনগরে তার বাড়ির ভিতরেই রয়েছে একটি৷
ছবি: Satyajit Shaw
‘লোক ডেকে খাওয়াতো’
বাংলাদেশের নাগরিক সুকুমার মৃধা প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গে থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ পিন্টু দাস নামের এই ব্যক্তি জানান, ‘‘সুকুমার মৃধা খুব ধনী লোক বাংলাদেশও ওর সম্পত্তি আছে শুনেছি, বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে ক্লাব থেকে ১০০ লোক ডেকে খাওয়াতো৷ প্রত্যেক বছর পাড়ার পুজোর সভাপতি হতো এবং ভালো টাকা ডোনেশন দিত৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
‘ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি’
স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, ‘‘আমরা ওনাকে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি৷ আমাদের কোনোরকম সন্দেহ হয়নি কারণ আমরা জানি বাংলাদেশে ওনার ঘর-বাড়ি আছে ও কাজ করে ওখান থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আসে৷ তারপর শুনি এই ঘটনা ইডির লোকজন এসে বাড়ি সিল করে দিয়ে যায়৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
ইডি যা বলছে
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রিতীশ কুমার হালদার, প্রনেশ কুমার হালদার ও তাদের সহযোগীদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের ১০ টি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে৷ এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
পি কে হালদারের খোঁজ
এই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বাংলাদেশে পলাতক আসামী পি কে হালদারেরও খোঁজ পায় ইডি৷ তিনি অবৈধভাবে কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেখানে শিবশঙ্কর হালদার নামে বসবাস করছিলেন৷ ইডি বলছে, তিনি ও তার সহযোগীরা কলকাতার মেট্রোপোলিসসহ বিলাসবহুল সব এলকায় অবৈধভাবে বহু সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করেছেন৷ তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাংলাদেশ যা বলছে
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার বলেছেন, “পি কে হালদার ওয়ান্টেড ব্যক্তি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে অনেক দিন ধরে তাকে চাচ্ছি৷ ...সে গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমাদের কাছে এখনও (ভারত থেকে) অফিসিয়ালি কিছু আসেনি৷’’ এর আগে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে যত দ্রুত সম্ভব বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে৷
ছবি: bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
আইনজীবী বলেছেন, ''সংবাদমাধ্যমকে এইটুকুই জানানো যেতে পারে যে, এখনো পর্যন্ত তার ১৩টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের হদিশ পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রচুর জমিও কিনেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছিল, যা দিয়ে মূলত ফ্ল্যাট, বাড়ি, জমি কেনা হয়েছে।''
আইনজীবী জানিয়েছেন, ''তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন সম্পত্তির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী মানুষ জড়িত থাকতে পারেন, তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম জানানো যাচ্ছে না।''
গত ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তারপর থেকেই আদালতের নির্দেশে পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা জেল হেফাজতে আছেন।