৮৮ ভাগ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীতে ঢুকে পড়েছে প্লাস্টিক
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডাব্লিউডাব্লিউএফ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাগরের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে প্লাস্টিক৷ প্রথমে সামুদ্রিক প্রাণীদের দেহে এবং সেখান থেকে মানুষসহ অন্য প্রাণীদের দেহেও ঢুকে পড়ছে প্লাস্টিক৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডাব্লিউডাব্লিউএফ)-এর প্রতিবেদনে তাই যত দ্রুত সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনেরও আহ্বান জানানো হয়৷ জার্মানির আলফ্রেড ভেগেনার ইন্সটিটিউটের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) আরো জানায়, অন্তত ৮৮ ভাগ বা দুই হাজার ১৪৪ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর দেহই এখন প্লাস্টিকে প্রাভাবিত৷ ফলে মানুষসহ অন্য যেসব প্রাণী ওইসব সামুদ্রিক প্রাণী খায়, তাদের দেহেও ঢুকে পড়ছে প্লাস্টিক৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শতকরা ৫২ ভাগ সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং ৯০ ভাগ সমুদ্র-নির্ভর পাখির দেহেই কোনো-না-কোনোভাবে এখন প্লাস্টিক যাচ্ছে৷ পরিস্থিতি এত ভয়াবহ যে,দুই হাজার ৫৯০টি বিজ্ঞানবিষয়ক সমীক্ষার তথ্য নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরে ভাসমান প্লাস্টিকে তৈরি অতিকায় ‘প্লাস্টিকের দ্বীপ’-এর সন্ধান পাওয়ার খবরও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে স্নিকার!
02:35
ডাব্লিউডাব্লিউএফ মনে করে, প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে না নিলে ২০৪০ সালের মধ্যে সাগরে প্লাস্টিকের বর্জ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে৷হলুদ সাগর পূর্ব চীন সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের অবস্থা ইতিমধ্যে ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই তিনটি সাগর ইতিমধ্যে প্লাস্টিক ধারণের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে৷
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হবে৷ সমুদ্রকে বাঁচাতে তাই সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ নিয়ে আলোচনা শেষে এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বানও জানিয়েছে ডাব্লিউডাব্লিউএফ৷
এসিবি/কেএম (এএফপি, ইফই, ডিপিএ)
গত অক্টোবরে প্রকাশিত ছবিঘরটি দেখুন...
সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশে বাংলাদেশের নদী
সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে নবম স্থানে বাংলাদেশ৷ সম্প্রতি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে৷ গেল এপ্রিল মাসে সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশ দেশের নয়টিই এশিয়ার৷
ছবি: AFP via Getty Images
নদী থেকে সমুদ্রে
নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডের সাত গবেষকের করা এই গবেষণা বলছে, সমুদ্রের প্রায় ৮০ ভাগ নদীবাহিত প্লাস্টিক বর্জ্য আসে পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি নদী থেকে৷ এর একটি বড় অংশ আসে এশিয়ার নদীগুলো থেকে৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
ছোট নদীর দায়
২০১৭ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলেছিল, পৃথিবীর ২০টি বড় নদী, যার অধিকাংশই এশিয়াতে সমুদ্রের ৬৭ ভাগ প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী৷ তবে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, বড় নদী নয়, বরং ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকা দিয়ে যেসব ছোট নদী গেছে, সেগুলোই মূলত এই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে যায় বড় নদীতে এবং পরে তা সমুদ্রে পড়ে৷
ছবি: Gaston Brito Miserocchi/Getty Images
বছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন
গবেষকদের হিসেবে, নদীগুলো বছরে কমপক্ষে ৮ লাখ টন থেকে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়৷ নেচারের গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই প্রাক্কলন সাড়ে এগার লাখ থেকে ২৪ লাখ টনের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
গবেষণায় দেড় হাজারের বেশি নদী
নতুন গবেষণাটিতে মোট ১,৬৫৬টি নদীর তথ্য নিয়ে কাজ করা হয়েছে৷ এখানে নদীর বেসিনগুলোর নানা তথ্য, নদীর ব্যবহার সবকিছুকেই গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে৷ যেমন, সমুদ্রতীর থেকে নদীগুলোর দূরত্ব, বৃষ্টিপাতের প্রভাব, বাতাসের গতিবেগ, ভূমির ঢাল ও বিস্তৃতি এবং এগুলো প্লাস্টিক পরিবহণে কেমন প্রভাব ফেলে এসব৷
ছবি: Rui Vieira/empics/picture alliance
এশিয়ার দেশগুলো শীর্ষে
দূষণের মাত্রায় এশিয়ার নদীগুলো এগিয়ে আছে৷ শীর্ষ দশের ব্রাজিল ছাড়া বাকি সবদেশ এশিয়ার৷ শীর্ষ ৫০টি নদীর মধ্যে এশিয়ার আছে ৪৪টি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. M. Rahman
সবার ওপরে ফিলিপাইন্স
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির রাজধানী ম্যানিলার জনবহুল এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পাসিগ নদী দূষণের তালিকায় সবার ওপরে৷ বছরে প্রায় ৬৯ হাজার টন প্লাস্টিক বহন করে এই নদী৷ দেশটি বছরে মোট তিন লাখ ৬০ হাজার প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
৯-এ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অবস্থান ৯৷ বছরে প্রায় ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে দেশটির নদীগুলো৷ বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলি ও রূপসা নদী থেকে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য যায় বঙ্গোপসাগরে৷ পদ্মা দিয়ে বছরে প্রায় সাত হাজার টন, কর্ণফুলি দিয়ে প্রায় তিন হাজার টন এবং রূপসা দিয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/Getty Images/AFP
দ্বিতীয় ভারত, চতুর্থ চীন
ভারতের নদীগুলো বছরে এক লাখ ৩০ হাজার টন বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়৷ আর চীন তৈরি করে প্রায় ৭১ হাজার টন৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/S. Zhengyi
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব
শীর্ষ দশে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার৷ ফিলিপাইন্স ছাড়াও এখানে রয়েছে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড৷ শুধু এই দেশগুলোই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টন বর্জ্য ফেলে সমুদ্রে৷
ছবি: AFP/B. Ismoyo
সমাধানসূত্র
আশার কথা হলো, সমুদ্র পরিষ্কার করার জন্য এখন পৃথিবীতে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে৷ তারা প্রচুর অর্থও সেখানে ব্যয় করছে৷ কিন্তু গবেষকরা বলছেন, শুধু পরিষ্কার করাই সমাধান হতে পারে না৷ যেসব জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো দিয়ে এসব নদী বয়ে গেছে, সেসব এলাকায় পানিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যেন না ফেলা হয়, তেমন উদ্যোগ নিতে হবে৷