ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে ৮ বছরের শিশু নোরা৷ মার্কিন নাগরিক শিশুটির মৃত্যুর পর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে ওবামা প্রশাসনের ড্রোন হামলা নিয়েও৷
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে ছোট্ট নোরার মৃতদেহ দেখা গেলেও পেন্টাগন বলছে ঐ অভিযানে ১৪ আল কায়েদা সদস্য নিহত হয়েছে৷ এছাড়া মার্কিন নৌবাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন৷ কিন্তু ইয়েমেনের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নিহতের সংখ্যা ৩০৷ এদের মধ্যে ১০ জন নারী ও শিশু রয়েছে৷ নোরা আল আওলাকী তাদেরই একজন৷
নোরার বাবা ছিলেন অ্যামেরিকান এবং আল কায়েদার মুখপাত্র৷ ২০১১ সালে ওবামা প্রশাসনের ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি৷ তার ১৬ বছরের ভাইও অন্য এক অভিযানে নিহত হয়৷
ট্রাম্প প্রশাসনের এটাই প্রথম সামরিক অভিযান৷ অভিযানের আদেশ দেয়ার আগে গোয়েন্দা সংস্থা বা অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি ট্রাম্প৷ রবিবার ইয়েমেনের কেন্দ্রে মার্কিন বাহিনী এই অভিযান চালায়৷
কোন কোন দেশে রয়েছে শিশু যোদ্ধা
পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় চলছে সংঘর্ষ৷ আর এসব সংঘর্ষে শিশুরা যে কেবল সহিংসতার শিকার হচ্ছে তা নয়, তাদের হাতেও উঠছে হাতিয়ার৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব দেশের কথা৷
ছবি: Guillaume Briquet/AFP/Getty Images
ভারত
ছত্তিশগড়ের মতো মাওবাদীর প্রভাব আছে এমন এলাকাগুলোতে অনেক শিশুর হাতে বন্দুক তুলে দেয়া হয়েছে৷ পুলিশের সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষে বেশ কিছু শিশু নিহতও হয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে তালিবানসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন শিশুদের যুদ্ধে শামিল করে৷ বিশেষ করে এদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এমনকি আফগান পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে শিশুদের পুলিশে ভর্তি করানোর৷
ছবি: picture alliance/Tone Koene
মিয়ানমার
মিয়ানমারে বহু বছর আগে থেকে শিশুদের জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করিয়ে দেয়ার চল রয়েছে এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় লড়াইয়ে পাঠানো হয় তাদের৷ এদের মধ্যে ১১ বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Kittiwongsakul
মধ্য আফ্রিকা
মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে ১২ বছরের শিশুদের বিভিন্ন বিদ্রোহী দলে বন্দুকের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2012-0881/Sokol
চাদ
সেই দেশে কেবল বিদ্রোহী দলগুলোই নয়, সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠনেও শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালে সরকার সেনাবাহিনীতে শিশুদের ভর্তি না করার বিষয়ে সরকার এক সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2010-1152/Asselin
কলম্বিয়া
দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দেশটিতে সম্প্রতি গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে৷ কিন্তু এর আগে ফার্ক বিদ্রোহীরা শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিত৷
ছবি: AP
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গো
যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপ বলছে, এক সময় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গোয় ৩০ হাজার কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন গ্রুপের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিত৷ এমনকি যৌনদাসী হিসেবেও কিশোরীদের ব্যবহার করত এসব গোষ্ঠী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
ইরাক
আল কায়েদা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শিশুদের কেবল যোদ্ধা হিসেবেই নয়, গুপ্তচর হিসেবেও ব্যবহার করে৷ এছাড়া আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সোমালিয়া
জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব ১০ বছরের শিশুদেরও জোর করে তাদের দলের যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলে৷ বেশিরভাগ সময়ই শিশুদের স্কুল বা বাড়ি থেকে অপহরণ করে দলে নেয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Abdi Warsameh
দক্ষিণ সুদান
২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পর শিশুদের সেনাবাহিনীতে ঢোকানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ তারপরও বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী শিশুদের ব্যবহার করছে৷
ছবি: DW/A. Stahl
10 ছবি1 | 10
নোরার দাদা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, মেয়েটির ঘাড়ে বুলেট লাগার পর দুই ঘণ্টা ধরে রক্তপাত বন্ধ না হওয়ায় তার মৃত্যু হয়৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন এই নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন এ হামলা চালিয়েছে৷ এটা খুবই দুঃখজনক, এটা অপরাধের শামিল৷
ধারণা করা হয়েছিল এই অভিযান ওবামা প্রশাসনের অনুমোদিত, অর্থাৎ ওবামা অফিস ছাড়ার আগে এ নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে সোমবার এনবিসি নিউজকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন এই অভিযানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছে৷
ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর অনেকেই নানান মন্তব্য করেছেন৷ প্রায় সাড়ে চারশ মন্তব্যের বেশিরভাগেই এর সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের ড্রোন হামলার তুলনা করা হয়েছে৷ মন্তব্যকারীরা বলেছেন, যখন ওবামা প্রশাসন ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, সেই সময় অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হলেও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি৷ কেউ লিখেছেন, ‘‘মেয়েটির ছবিটি দেখলেই চোখে পানি চলে আসছে৷’’ আবার কেউ লিখেছেন, ‘‘এ আর নতুন কী? যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অভিযানে নিষ্পাপ নারী ও শিশুরা প্রায়ই প্রাণ হারায়৷’’
ফেসবুকে পোস্ট করার ৩ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার বার৷ ২ হাজার ৮০০ বার শেয়ার করা হয়েছে এটি৷
এপিবি/এসিবি
ইয়েমেন নিয়ে ডিসেম্বরের ৮ তারিখের এই ছবিঘরটি দেখতে পারেন...
অন্তত হাসতে পারছে মেয়েটি
বয়স তার ১৮৷ কিন্তু ওজন মাত্র ১৬ কেজি৷ তাও গত দেড় মাসের চিকিৎসায় ওজন পাঁচ কেজি বেড়েছে বলে৷ ছবিঘরে থাকছে সাঈদা আহমেদ বাঘিলির কথা৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
অবশেষে মুখে হাসি
গত অক্টোবরে সাঈদা আহমেদ বাঘিলিকে যখন ইয়েমেনের হোডাইডা শহরের আল থাওরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন ১৮ বছরের মেয়েটির ওজন ছিল মাত্র ১১ কেজি৷ সহজে চোখ খোলা রাখতে পারত না সে৷ দাঁড়াতেও পারত না৷ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এখন অন্তত সে হাসতে পারছে৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
তবে ঐটুকুই
হ্যাঁ৷ সে যে হাসতে পারছে সেটুকুই উন্নতি বলা হয়৷ কারণ এখনও তার শরীর বেশ খারাপ৷ হাড়গোড়ের অবস্থাও ভঙ্গুর৷ অবস্থা যে কোনোদিন স্বাভাবিক হতে পারে, সে আশা করছেন না ডাক্তাররা৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আগে যেমন ছিল
প্রথম দু’টি ছবি আর ‘ক্যাপশন’ পড়ার পর যাঁরা বাঘিলি আগে দেখতে কেমন ছিল জানতে চান তাদের জন্য এই ছবি৷ অক্টোবরে তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখনকার ছবি এটি৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
শুরু পাঁচ বছর আগে
পাঁচ বছর আগে প্রথম বাঘিলির মধ্যে পুষ্টিহীনতার লক্ষণ দেখা দেয়৷ গলায় ব্যথার কারণে সে শক্তি কিছু খেতে পারে না৷ ফলে শুধু তরল জাতীয় খাবার খেতে হচ্ছে তাকে৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
গৃহযুদ্ধ সমস্যা বাড়িয়েছে
ইয়েমেনে গত প্রায় ১৯ মাস ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট ও ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতি মুভমেন্টের সদস্যদের মধ্যে এই যুদ্ধ চলছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বাঘিলির অভিভাবকরা পর্যাপ্ত অর্থ আয় করতে পারেননি বলে এই সময়টায় তাঁর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি৷ ছবিতে বাঘিলির বাবাকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
অবশেষে
বাঘিলির খালা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, কয়েকজন দানশীল ব্যক্তি অর্থ সহায়তা দেয়ায় বাঘিলিকে ২২ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ ছবিটি সেই সময় তোলা৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
আগের কথা
অসুস্থ হওয়ার আগে ভেড়া পালতো বাঘিলি৷ হোডাইডা থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি গ্রামে তারা বাস করে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
খাদ্য সংকট
জাতিসংঘ বলছে, গৃহযুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে৷ বর্তমানে দেশটির অর্ধেকেরও (১৪ মিলিয়ন) বেশি নাগরিক খাদ্য সংকটে রয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Yahya Arhab
অপুষ্টি
ইউনিসেফ-এর হিসেবে সে দেশের প্রায় ১৫ লক্ষ শিশু এখন অপুষ্টিতে ভুগছে৷ এর মধ্যে তিন লক্ষ ৭০ হাজার শিশুর মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা এত বেশি, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল করে দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/B. Stirton
প্রাণহানি
গৃহযুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ অবশ্য জাতিসংঘের হিসেবে সংখ্যাটি সাত হাজারের কাছাকাছি৷