1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির জন্য ঐতিহাসিক দিন

মার্সেল ফুর্স্টেনাউ/দেবারতি গুহ৯ নভেম্বর ২০১২

৯ই নভেম্বর – জার্মানির ইতিহাসে দিনটির একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে৷ ১৯৮৯ সালের এই দিনটিতেই বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটে৷ তবে আদতে এর বহু আগে, ১৯১৮ সাল থেকেই বিশেষ এক ঐতিহাসিক মাত্রা লাভ করে দিনটি৷

ছবি: © N-Media-Images - Fotolia.com

১৯১৮ সালের ৯ই নভেম্বর – রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটে জার্মানির৷ ঐ দিন বার্লিনে অবস্থিত রাইশসটাগের একটা ছোট্ট বারান্দা থেকে সামাজিক গণতন্ত্রী রাজনীতিক ফিলিপ শাইডেমান জার্মানিকে একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন৷ বলেন, ‘‘শ্রমিক এবং সেনারা, এ দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে আপনারা অবগত হন৷ আজ থেকে একটি নতুন সমাজ, এক নতুন সমাজ ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলো৷ এ এক বিশাল পরিবর্তন৷ আমাদের সামনে আজ তাই অনেক কাজ৷ তবে এ কাজ আমার, আপনার, সমগ্র জাতিকে একত্র হয়ে করতে হবে৷ জয় হোক জার্মান প্রজাতন্ত্রের৷''

ফিলিপ শাইডেমানছবি: dpa

এভাবেই ঐ দিন অবসান ঘটে কাইজারতন্ত্রের৷ অর্থাৎ, ইতি ঘটে রাজা দ্বিতীয় কাইজার উইলিয়ামের শাসনামলের৷ তবে নবগঠিত জার্মান প্রজাতন্ত্র সমস্যামুক্ত ছিল না, ছিল না দীর্ঘস্থায়ী৷

১৯২৩ সালের ৯ই নভেম্বর – জার্মানির ইতিহাসে আত্মপ্রকাশ করেন আডল্ফ হিটলার৷ আর তার মাত্র দশ বছরের মধ্যেই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন৷ ১৯৩৩ সালের ১০ই মে বার্লিনে আজকের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের সামনে বই পোড়ানোর প্রতীকি ঘটনার মধ্য দিয়ে ইহুদি বিদ্বেষ মারাত্মক আকার ধারণ করে৷ বার্লিন সহ ২১টি শহরে এভাবেই জার্মানির ‘জাতিসত্ত্বার শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ'-এর মধ্য দিয়ে নাৎসিদের আসল রূপ স্পষ্ট হয়ে যায়৷ তাদের চরম জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ পরবর্তীতে ভয়ংকর আকার ধারণ করে৷ প্রশস্ত করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ৷

১৯৩৮ সালের ৯ই নভেম্বর – জার্মানির ইতিহাসে একটি লজ্জাজনক কালো অধ্যায়ের সাক্ষী এই দিনটি৷ সেদিন গোটা দেশে ইহুদিদের মালিকানায় থাকা প্রায় ৭,৫০০ দোকান, দপ্তর ইত্যাদি নানা সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়৷ বাদ যায় না সিনাগগ বা ইহুদি উপাসনাস্থলও৷ প্রায় ১,২০০টি সিনাগগে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, তছনছ করা হয় ইহুদি কবরস্থানও৷ নাৎসি প্রচারণা যন্ত্র এই তাণ্ডবলীলাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তুলে ধরলেও এর পেছনে ছিল নাৎসি এসএস এবং এসএ বাহিনীর সুপরিকল্পিত সাংগঠনিক উদ্যোগ৷ ঐতিহাসিকদের মতে, এ সময়ে প্রায় ১,৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়৷ এসএস বাহিনীর এক কমান্ডার রবার্ট লাই-র ভাষায়, ‘‘ইহুদিদের মরতেই হবে৷ তাদের আমরা নির্বংশ করবো৷ এটাই আমাদের বিশ্বাস, আমাদের লক্ষ্য৷''

১৯৩৮ সালের ৯ই নভেম্বর গোটা জার্মানিতে ইহুদিদের মালিকানায় থাকা প্রায় ৭,৫০০ দোকান, দপ্তর ইত্যাদি নানা সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়ছবি: AP

এরপর থেকেই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলিতে শুরু হয় বড় আকারের নিধনযজ্ঞ৷ নিপুণভাবে চলতে থাকে মানুষকে গ্যাস চেম্বারে পুরে দেওয়ার প্রক্রিয়া৷ কিন্তু ইতিহাস সেখানেই থেমে থাকে না৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয় জার্মানি৷ এর চার বছর পর ১৯৪৯ সালে জার্মানি ভেঙে দুটো রাষ্ট্রের জন্ম হয়৷ একটা অংশের নাম হয় ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি, যেটা একীভূত জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়৷ আর অন্যটির নাম জার্মান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক বা জিডিআর৷ যা বিশ্বের কাছে পূর্ব জার্মানি নামেই পরিচিতি পায়৷

তবে কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে নাগরিকদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না৷ ভালো ছিল না অর্থনৈতিক অবস্থাও৷ ফলে সেখানকার মানুষ দেশ ছাড়ার জন্য উন্মুখ ছিল৷ অনেকেই চলে যান পশ্চিমে৷ কিন্তু এই সংখ্যাটা যখন বাড়তে থাকে, তখন জার্মানির পূর্বাঞ্চলের শাসক দল ‘সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি অফ জার্মানি' বা এসইডি দুই দেশের সীমান্ত বরাবর পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ১,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটা নিষিদ্ধ এলাকা গড়ে তোলে৷ যা পার হতে গিয়ে প্রাণ হারান অসংখ্য মানুষ৷

১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটেছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb

১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর – ঐতিহাসিক এ দিনটিতে পূর্ব-পশ্চিমের ঐ সীমানা খুলে দেয়া হয়৷ অর্থাৎ বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটে৷ ঐ দিন পশ্চিম জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ওয়ারশতে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাসোভিয়েটস্কি'র সঙ্গে মিলিত হন৷ সেদিন সন্ধ্যাতেই পূর্ব বার্লিনের হাজার হাজার মানুষ ছোটেন পশ্চিম বার্লিনের দিকে৷ এভাবেই পুনরেকত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যায় দুই জার্মানি৷ যা পূর্ণতা পায় ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর৷ জার্মানি আবারো একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ রাতের আকাশে বার্লিনের রাইশসটাগ ভবনের ওপর আতশবাজির ফোয়ারা ছড়িয়ে পড়ে, সবার চোখেই দেখা যায় আবেগাশ্রু৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ