ফোন করে নানা অছিলায় টাকা আদায় করার ঘটনা অহরহ ঘটছে জার্মানিতে৷ ৯৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা দেখিয়ে দিলেন কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয়, ধরিয়ে দিতে হয় প্রতারককে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
বিজ্ঞাপন
হামবুর্গের রাহ্লস্টাডের ওই নারীকে যখন ফোনে একজন ‘বন্ধু’ পরিচয় দিয়ে করোনা চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর কিনতে ৩০ হাজার ইউরো চাইলেন, খুব খটকা লেগেছিল তার৷ করোনা চিকিৎসায় তো এত টাকা লাগার কথা নয়! তাছাড়া জার্মানিতে কি ভেন্টিলেটরের অভাব পড়ে গেল?
খুব সন্দেহ হলেও তা বুঝতে দেননি৷ তাৎক্ষণিকভাবে শুধু বলেছেন, ব্যাংক থেকে ২০ হাজার ইউরো তুলে দেয়া যাবে, তবে বাকি টাকা দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়৷
ভাগ্যিস, তখন কেয়ারটেকার বাড়িতে এসেছিলেন! ৯৫ বছর বয়সি নারী লাউডস্পিকারে পুরো কথোপকথন শোনার সুযোগ করে দিলেন৷ কেয়ারটেকার বুঝলেন, বিশাল এক প্রতারক চক্র বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে মাঠে নেমেছে৷
প্রতারণার গল্প নিয়ে যত সিনেমা
ব্যাংক হিসাব শূন্য, অথচ চেক দিয়ে কোটি কোটি ডলার তুলছেন৷ আবার তিনিই বনে যাচ্ছেন পাইলট, ডাক্তার কিংবা আইনজীবী৷ মুচি ক্যাপ্টেন বনে গ্রেপ্তার করলেন সিটি মেয়রকে৷ বিশ্বব্যাপী এমন অনেক প্রতারণার গল্প উঠে এসেছে বিভিন্ন সিনেমায়৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ (২০০২)
বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার সূচনা হয় ফ্রাঙ্ক আবাগনালের৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সেই রেখেছিলেন প্রতারক হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর৷ পর্যায়ক্রমে পাইলট, এরপর ডাক্তার এবং আইনজীবীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাকে৷ স্টিভেন স্পিলবার্গের মনোমুগ্ধকর সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যান ইউ এভার ফরগিভ মি?’ (২০১৮)
আপনার লেখার হাত যদি ভালো হয়, তাহলে অর্থকষ্ট আপনার কাছে ব্যাপারই না! তেমনই এক দৃষ্টান্ত আর্থার লি ইসরায়েল, যিনি তারকাদের নাম করে ৪০০টি চিঠি লিখেন এবং সেগুলো বিক্রি করে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ৷ এক সময় এফবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লে অপরাধ স্বীকার করে নেন তিনি৷ পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় সিনেমাটি৷ এটি ২০১৯ সালের অস্কারে ৩টি ক্যাটেগরিতে মনোনয়ন পায়৷
জার্মানির হিয়ারোনিমুস কার্ল ফ্রিডরিশ ফ্রাইহার ফন ম্যুনশাউজেন একজন প্রতিভাবান গল্পকথকও ছিলেন৷ গ্রামের বাড়িতে অভিজাত ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন এবং ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিজের গল্প বলতেন৷ কীভাবে তিনি কামানের গোলায় ভর করে বহুদূর পাড়ি দিয়েছেন, এমন গল্প শুনতেও মানুষ আসতো সেখানে৷ ‘মিথ্যাবাদী’ এই ব্যারনের গল্প বিভিন্ন সিনেমায় ঠাঁই পেয়েছে৷ এর একটি ১৯৪৩ সালের ‘ম্যুনশাউজেন’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’ (২০০৯)
চার বার জেল থেকে পালাতে পেরেছেন স্টিভেন জে রাসেল৷ এই প্রতারক তার প্রতিভা দিয়ে বিচারক, ডাক্তার ও মিলিয়নেয়ারসহ বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছিলেন৷ আর এসব করেই ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন৷ কমেডি চলচ্চিত্র ‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’-এ রাসেলের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়৷ কারাগারের সহবন্দি ফিলিপ মরিসের সঙ্গে তার প্রেমের নানা দিকও আছে ওই সিনেমায়৷
ছবি: Imago/EntertainmentPictures
‘অ্যামেরিকান হাসেল’ (২০১৩)
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ১৯৭০ সালে এফবিআইয়ের একটি অভিযানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা৷ একজন প্রতারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযানে৷ সিনেমাটি মোট ১০টি অস্কার নমিনেশন পেলেও পুরস্কার ঘরে তুলতে পারেনি৷
ছবি: imago/Unimedia Images
‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’ (১৯৫৬)
১৯০৬ সালে ক্যাপ্টেনের সাজ নিয়ে ক্যোপেনিকের টাউন হলে যান মুচি ফ্রিডরিশ ভিলহাইম ফোইগট৷ মেয়রকে গ্রেপ্তারের পর ট্রেজারিতে ডাকাতিও করেন তিনি৷ এই ডাকাতিতে তিনি কিছু সৈন্যকেও কাজে লাগাতে পেরেছিলেন৷ সত্য ওই ঘটনার উপর অনেকগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে, তার একটি ‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/IFTN
6 ছবি1 | 6
খুব অল্প কথায় ২০ হাজার ইউরো পাওয়া যাচ্ছে ভেবে প্রতারকের হয়ত একটু লোভ হচ্ছিল৷ তাই আরো কিছু টাকার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন সেই বৃদ্ধাকে৷ এক সময় আরো ১১ হাজার ইউরো দিতে রাজি হওয়ায় মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়ে ফোন ছাড়লেন কথিত প্রতারক৷
ততক্ষণে হামবুর্গ পুলিশকে পুরো ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন কেয়ারটেকার৷
পুলিশকে যে জানানো হতে পারে তা প্রতারক চক্রও অনুমান করেছিল৷ তাই প্রথমে পুলিশকর্তা এবং তারপর এক ব্যাংকারের পরিচয়ে দু'জন ফোন করে ৯৫ বছর বয়সি নারীর কাছে হঠাৎ বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংক থেকে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলেন৷ একটু পরেই আবার মূল প্রতারকের ফোন৷ টাকা নিতে লোক আসছে!
নির্ধারিত সময়ে বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থেকে নেমে এলেন একজন৷ তার হাতে খামটা তুলে দিলেন ৯৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা৷ ঠিক সেই মুহূর্তে আড়াল থেকে এগিয়ে এলো পুলিশ৷ গ্রেপ্তার হয়ে গেল প্রতারক চক্রের একজন৷
তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে হামবুর্গ পুলিশ৷ পাশাপাশি সবার প্রতি একটা অনুরোধও জানিয়েছে হামবুর্গ পুলিশ, ‘‘হঠাৎ নিজেকে আত্মীয় বা পরিচিত দাবি করে কেউ ফোন করলে ব্যাপারটাকে সন্দেহের চোখে দেখার চেষ্টা করুন৷ খুব জরুরি পরিস্থিতির কথা বলা হলেও নিজের ওপর চাপ বাড়াবেন না৷ সামান্যতম সন্দেহ হলেও তা ধরে রাখুন এবং পুলিশকে জানান৷’’