জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টের অন্যতম ঐতিহ্য ‘কুকুক’ ঘড়ি৷ সেই ঘড়িকে একটু অন্য রূপ দিয়ে বিখ্যাত হয়ে গেছেন স্টেফান স্ট্রুম্বেল৷ তাঁর তৈরি একটা ঘড়ির মূল্য ৯০ হাজার ইউরো পর্যন্ত উঠেছে!
বিজ্ঞাপন
জার্মান শিল্পী স্ট্রুম্বেলের কাজের বিষয় ‘হাইমাট', যার অর্থ জন্মভূমি৷ এর মাধ্যমে তিনি সবাইকে উৎসাহী করতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যাঁরা আমার কাজ দেখতে বা সেটা নিয়ে আলোচনা করতে আসেন, তাঁরা যেন, নিজ জন্মভূমির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন; যেন নিজ অঞ্চলকেই খুঁজে পান৷''
৩৪ বছরের এই শিল্পী মনে করেন, একেক অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য একেক রকম৷ ‘‘অনেকের কাছে জন্মভূমি মানে হলো, যেখানে জন্ম হয়েছে৷ আমার অবশ্য অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়, মনে হয় এর সঙ্গে যেন মায়ের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে৷ এটা এমন এক অনুভূতি, যা আপনি সারা জীবনেও পাবেন না৷''
জার্মানির ‘ব্যার্গ পার্ক’ বা পাহাড়ি পার্ক
পাহাড়ি পার্কটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন পর্যটকরা পুরো পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারেন, মুক্ত বাতাস সেবন করতে পারেন – এই পার্ক তৈরির এটাই মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান ‘ব্যার্গ পার্ক’
জার্মানির ভিলহেল্মসহ্যোয়ের ‘ব্যার্গ পার্ক’ বা পাহাড়ি পার্কটি এ বছর, অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২৩ জুন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ অপূর্ব সুন্দর ছায়া শ্যামল ঘেরা সবুজ এই পার্কটি আস্তে আস্তে একটু ওপরের দিকে উঠে গেছে বলেই এর নাম পাহাড়ি পার্ক৷
ছবি: imago/imagebroker
অবকাঠামো
পার্কটি মোট সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা৷ পাহাড়ি পার্কটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন পর্যটকরা পুরো পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারেন, মুক্ত বাতাস সেবন করতে পারেন – এই পার্ক তৈরির এটাই মূল লক্ষ্য৷ পার্কের ভেতরে দর্শনীয় বিল্ডিং এবং প্রাসাদও রয়েছে৷
ছবি: imago/blickwinkel
ভিলহেল্ম প্রাসাদ
এই প্রাসাদটি প্রথমে সন্ন্যাসীদের আশ্রম ছিল এবং ১৭৮৬ থেকে ১৭৯৮ পর্যন্ত ভিলহেল্ম প্রাসাদের রূপান্তরিত করা হয়৷ আর বর্তমানে এটাকে আর্ট গ্যালারি এবং অ্যান্টিক সংগ্রহশালা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
ছবি: imago/Pan-Images
ফ্লোরা
এই পার্কে ফুল গাছের চেয়ে বেশি রয়েছে বিভিন্ন জাতের বড় বড় সব গাছ৷ তবে ব্যতিক্রম হিসেবে রয়েছে ফুলের রাজা গোলাপের বিশাল সংগ্রহ৷ যেটি সুন্দর করে একটি দ্বীপের মতো করে বানিয়ে রাখা হয়েছে৷ এই গোলাপের দ্বীপটি ১৭৯৫ সালে বানানো হয় এবং জার্মানিতে প্রথম এখানেই গোলাপ চাষ করা হয়েছে৷
ছবি: Imago
নানা জাতের গাছ
বিভিন্ন দেশের গাছের সংগ্রহ রয়েছে এখানে৷ ১৭৭৭ সালেই ৩২৯ রকমের গাছ লাগানো হয়েছিল৷ তার মধ্যে ১২৮ রকমের গাছ আনা হয়েছিল সুদূর অ্যামেরিকা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হারকিউলিস স্ট্যাচু
পার্কের ভেতরে রয়েছে বিখ্যাত গ্রিক বীর হারকিউলিসের নামে ‘হারকিউলিস বিল্ডিং’, যার চূড়ায় দেখা যাচ্ছে একটি পিরামিড৷
ছবি: Fotolia
বিশাল গ্রিন হাউজ
পার্কের ভেতরে রয়েছে বিশাল এই গ্রিন হাউজটি৷ এখানে বিভিন্ন দেশের গাছ-পালার সংগ্রহ রয়েছে৷ এমনকি, গ্রিন হাউসের উষ্ণতা বাড়িয়ে এখানে লাগানো হয়ে থাকে বাংলাদেশে পাওয়া যায়, এমন গাছও৷
ছবি: imago/Pan-Images
বল হাউজ
পার্কে শুধু মুক্ত বাতাস সেবন নয়, চিত্ত বিনোদনের জন্য রয়েছে একটি বল হাউজ, যার অন্য পাশটি থাকার জন্য হোটেল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷পার্কে শুধু মুক্ত বাতাস সেবন নয়, চিত্ত বিনোদনের জন্য রয়েছে একটি বল হাউজ, যার অন্য পাশটি থাকার জন্য হোটেল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Uwe Zucchi
ব্যার্গ পার্ক, শহর এবং জনগণ
সবার জন্যই এই পার্ক – যা নানাভাবে জনগণ ব্যবহার করে থাকে৷ জার্মান সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে পার্কের ভেতরে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ব্যার্গ পার্কের জলপ্রপাত
অত্যন্ত সুন্দর এই জলপ্রপাতটির পানির খেলা সকলেই উপভোগ করেন৷ তবে জলতরঙ্গের খেলা দেখা যায় মে মাস থেকে অক্টোবব মাস পর্যন্ত প্রতি বুধবার, রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে৷ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসের প্রথম শনিবার রঙীন বাতির জলতরঙ্গের খেলা দেখানো হয়৷ যার মাধ্যমে এক একটি জায়গা ভিন্ন ভিন্ন রং-এর আলোর মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়৷
ছবি: imago/imagebroker
হাজারো পর্যটক
ব্যার্গ পার্কে সব সময়ই পর্যটকের ভিড় হয়৷ তবে গ্রীষ্মের সুন্দর আবহাওয়া থাকলে বা পার্কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে যে, এক এক দিনে কয়েক হাজার পর্যটক এসে হাজির হন এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
নিউ ইয়র্ক টাইমস জার্মান এই ঘড়ি প্রস্তুতকারকের অন্যরকম গুণের খবর পেয়ে ২০১০ সালে তাঁকে নিয়ে একটা বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সে ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘ওটা আমার জন্য ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা৷ যখন আমি সদ্য প্রিন্ট হয়ে আসা পত্রিকাটি হাতে নিয়ে দেখছিলাম, মনে হচ্ছিল, সবাই এখন আমার কাজের বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছে; এবং সে কারণেই এখন সবাই আমাকে চায়৷''
সম্ভবত প্রথম জার্মান হিসেবে স্ট্রুম্বেলের একটা কাজ ২০১১ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ‘স্টাইল' ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছিল৷ পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেন স্ট্রুম্বেল – যার মাধ্যমে তিনি ‘প্রতীকী' বিষয়ের অবসান চান৷
ডয়চে ভেলেকে নির্মিতব্য একটি ঘড়ি দেখিয়ে স্ট্রুম্বেল জানান, কাজ শেষ হলে এই ঘড়িটার দাম হবে ৯০ হাজার ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকার সমান৷ স্ট্রুম্বেলের ছোট ঘড়িগুলোর দামই পাঁচ থেকে ১৫ হাজার ইউরো, অর্থাৎ প্রায় পাঁচ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা৷
কয়েক বছর আগে তাঁর আজকের এই অবস্থান অকল্পনীয় ছিল৷ কারণ নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্ট্রুম্বেল দেওয়ালচিত্র আঁকতেন৷ সেসময় অপরাধের কারণে কয়েকবার তাঁকে আদালতে যেতে হয়েছিল৷