চড়া দ্রব্যমূল্য ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সবাইকে একটু স্বস্তি দিতে ট্রেনে, বাসে মাত্র ৯-ইউরোর টিকেটে সারা জার্মানি ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছিল সরকার৷ জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাস শেষ হতেই শুরু হয়েছে সস্তা টিকের লাভালাভ বিচার৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
মাত্র ৯ ইউরোতে টিকেট দেয়ায় জার্মানির ১৬টি রাজ্যে ট্রেন, বাস আর ট্রামের টিকেট বিক্রির আয় অনেক কমে যাওয়ার কথা৷ তবে তা হতে দেয়নি জার্মান সরকার৷ ১৬টি রাজ্যকে আগাম মোট ২.৫ বিলিয়ন ইউরো অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছিল৷ ফলে প্রতিটি রাজ্যে ধুম পড়েছিল ৯-ইউরোর টিকেট বিক্রির৷
তা বিক্রি কেমন হয়েছে? জার্মানির ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন ভিডিভি-র দেয়া তথ্য বলছে, তিন মাসে বিক্রি হয়েছে মোট পাঁচ কোটি ২০ লাখ টিকেট কিনেছেন৷ অর্থাৎ জার্মানির মোট জনসংখ্যার ষাট ভাগেরও বেশি মানুষ কিনেছেন এই টিকেট৷
এই পাঁচ কোটি ২০ লাখের বাইরে এমন ১০ লাখ মানুষও ছিলেন, যারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়েছেন এই টিকেটের সুবিধা৷ এই ১০ লাখ মানুষ সারা বছরের জন্য গণপরিবহণের মাসিক টিকিট কিনে রেখেছিলেন৷ তাই তাদের আর নতুন করে ৯ ইউরোর টিকেট কিনতে হয়নি৷ প্রায় ৮০ ইউরোর মাসিক টিকেটটার দামই এই মাসের জন্য হয়ে গিয়েছিল ৯ ইউরো৷
তিন মাস শেষ হওয়ার পর সবার শুধু একটা বিষয়েই কৌতুহল- ৯ ইউরোর টিকেটে লাভ বেশি হয়েছে, নাকি ক্ষতি? বার্লিনভিত্তিক ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম সিভিটি ম্যানেজমেন্ট কনসাল্ট্যান্ট-এর সিনিয়র কনসাল্ট্যান্ট জোনাথন লাসার মনে করেন, লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে আসলে কে কী পাওয়ার জন্য এ টিকেট কিনেছিলেন, তার ওপর৷ তাই ‘‘লাভ হয়েছে, নাকি ক্ষতি?''- এমন প্রশ্নে তার উত্তর, ‘‘যদি (৯-ইউরোর টিকেটের) অফারকে নাগরিকদের ওপর থেকে আর্থিক চাপ কিছুটা কমানোর উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে আমি বলবো- হ্যাঁ, অনেকের লাভ হয়েছে৷ যদি এটাকে (গণপরিবহণের) বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখেন, সেক্ষেত্রেও বলবো- হ্যাঁ, অবশ্যই লাভ হয়েছে৷ কিন্তু যদি এটাকে টেকসই কোনো ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে চান, তাহলে বলবো, না৷''
৯ ইউরোর টিকিটে ঘোরার জন্য জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর কয়েকটি রুট
জার্মানিতে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে ৯ ইউরো বা সাড়ে আটশ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কেনা যাবে৷ এই টিকিটে ট্রেনে করে জার্মানির যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
ব্ল্যাক ফরেস্ট
এটি সম্ভবত জার্মানির ট্রেন ভ্রমণের ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অফার৷ মাত্র ৯ ইউরো বা সাড়ে আটশ টাকা খরচ করে কেনা টিকিট দিয়ে পুরো এক মাস ট্রেনে (দ্রুতগামী ট্রেন ছাড়া) করে জার্মানির যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাড়তি খরচ সামাল দিতে সরকার এই অফার নিয়ে এসেছে৷ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ব্ল্যাক ফরেস্ট রুটে ঘুরে আসা যেতে পারে৷
ছবি: Jürgen Wiesler/Zoonar/picture alliance
আপার মিডল রাইন
বিঙেন, ব়্যুডেসহাইম ও কোবলেনৎসের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া এই রুটে চলার সময় ট্রেনের জানালা দিয়ে দুর্গ আর মনোরম সব গ্রাম দেখা যাবে৷ আরও চোখে পড়বে আঙুর খেত৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
মোজেল রিভার রুট
কোবলেনৎস শহরে রাইন ও মোজেল নদী একসঙ্গে মিশেছে৷ জার্মান ট্রেন সংস্থা ডয়চে বানের মোজল রুট শুরু হয়ে কোবলেনৎস থেকে৷ শেষ হয় কার্ল মার্ক্সের জন্মভূমি ট্রিয়ারে গিয়ে৷ পথে পড়বে কখেমের মতো অসাধারণ সুন্দর গ্রাম৷ আঙুর ক্ষেত আর দুর্গতো আছেই৷ মন চাইলে কোথাও নেমে ওয়াইনের স্বাদও গ্রহণ করা যেতে পারে৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
স্টুটগার্ট-লিন্ডাও
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত লেক কন্সটান্সের জার্মান অংশের দ্বীপ শহর লিন্ডাও৷ স্টুটগার্ট থেকে আরই৫ ট্রেনে চড়ে সেখানে যাওয়া যায়৷ চলতি পথে বুনো ফুলের অবারিত মাঠ আর প্রকৃতি এবং আল্পসের দৃশ্য দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে৷
ছবি: Werner Thoma/Zoonar/picture alliance
মিউনিখ-জালৎসবুর্গ
জার্মানির মিউনিখ থেকে যাত্রা শুরু করে ৯ ইউরোর টিকিট দিয়ে আপনি চলে যেতে পারবেন অস্ট্রিয়ায় মোৎসার্টের জন্মভূমি জালৎসবুর্গে৷
ছবি: fabio lotti/Zoonar/picture alliance
হামবুর্গ-জ্যুলট
জার্মানির অন্যতম আকর্ষণীয় দ্বীপ জ্যুলট৷ হামবুর্গের আলটোনা থেকে আরই৬ ট্রেনে চেপে চার ঘণ্টারও কম সময়ে সরাসরি জ্যুলটে চলে যাওয়া যায়৷
ছবি: Axel Heimken/dpa/picture alliance
ড্রেসডেন-ডিয়েচিন, চেক প্রজাতন্ত্র
ড্রেসডেন থেকে শুরু করে যেতে পারেন বাড শান্ডাও পর্যন্ত৷ বেশিরভাগ পথই এলবে নদীর ধার ঘেঁষে চলে গেছে৷ এছাড়া দেখতে পাবেন অদ্ভুত গঠনের স্যান্ডস্টোনের পাহাড়৷ স্যাক্সোন সুইজারল্যান্ড জাতীয় পার্কের জার্মান অংশে হাইকিংয়ের জন্য হাইকাররা বাড শান্ডাও থেকে যাত্রা শুরু করেন৷ চাইলে বাড শান্ডাও থেকে চেক প্রজাতন্ত্রের ডিয়েচিন পর্যন্ত চলে যাওয়া যাবে৷ সেখানে আছে জাতীয় পার্কের চেক অংশ- বোহেমিয়ান সুইজারল্যান্ড৷
ছবি: Michal Fludra/NurPhoto/picture alliance
গেরা-শেব, চেক প্রজাতন্ত্র
ইটের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু গ্যোলচ্স ভায়াডাক্ট দেখতে চাইলে গেরা থেকে আরবি৪ বা আরবি২-তে চড়তে পারেন৷ ট্রেন আপনাকে নিয়ে যাবে চেক প্রজাতন্ত্রের শেব পর্যন্ত৷
ছবি: Wolfgang Thieme/dpa/picture-alliance
মিউনিখ-টেগানজে লেক
আল্পসে ঘেরা জার্মানির অন্যতম যাদুময় স্থান টেগানজে লেক৷ মিউনিখ থেকে সেখানে ট্রেনে করে পৌঁছানো যাবে৷ লেকের পাড়ে অবস্থিত দুটি সুন্দর শহর হচ্ছে গুমুন্ট ও টেগানজে৷
ছবি: Matthias Balk/dpa/picture alliance
বার্লিন-বাল্টিক সাগর
বার্লিনবাসী গ্রীষ্মে বাল্টিক সাগরপাড়ের বিভিন্ন শহরে যেতে পছন্দ করেন৷ ছবিতে তেমনই একটি শহর দেখতে পাচ্ছেন, নাম স্ট্রালসুন্ড৷ তবে ডয়চে বান বলছে আগস্ট মাসে ট্রেনে ভিড়ের কারণে সাইকেল হয়ত নাও নেয়া যেতে পারে৷ তাই গন্তব্যে পৌঁছে সাইকেল ভাড়া নেয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন৷
ছবি: H. Blossey/blickwinkel/picture alliance
10 ছবি1 | 10
জার্মানির জাতীয় রেলওয়ের আঞ্চলিক সংস্থা ডিবি রেজিওর প্রধান রাল্ফ ডামডে মনে করেন, ‘‘৯-ইউরোর টিকেট জার্মানির আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সব সমস্যার ওপরে আলো ফেলেছে৷'' এই তিনমাস যারা ৯-ইউরোর টিকেটে ট্রেন, বাস, ট্রামে চড়েছেন, তাদের অনেকেই তার সঙ্গে একমত হবেন৷ কারণ, এই তিনমাস, স্বল্প পাল্লার সব ট্রেন এবং বাস ও ট্রামে ভিড় ছিল প্রচুর৷ শীতাতপনিয়ন্ত্রণযন্ত্র অকেজো বলে মাঝে মাঝেই ট্রেনে গরমে সেদ্ধ হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়৷ অনেকে আবার জানিয়েছেন ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকার কথা৷
এমন কষ্টে পড়ে কেউ কেউ বলছেন, এভাবে ৯ ইউরোতে টিকেট দিয়ে রাজ্যগুলোকে ক্ষতি পোষাতে মোটা অঙ্কের টাকা না দিয়ে সেই টাকায় রেলওয়ের অবকাঠামোর উন্নয়ন করলেই বেশি ভালো হতো৷ আবার কেউ কেউ বলছেন উদ্যোগটা যেহেতু অনেক মানুষকে আকৃষ্ট করেছে, তাই এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকা উচিত৷