ঢাকার পল্টন ও রমনা থানায় করা নয়টি মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান সোহাগ উদ্দীন বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টারকে তা জানিয়েছেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল৷ এর আগে, স্থানীয় সময় দুপুরে জামিন আবেদনের শুনানি শেষ হলেও বিচারক আদেশ পরে দেওয়া হবে বলে জানান৷ মঙ্গলবার এসব মামলায় একই আদালতে মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল৷ এরমধ্যে ছয়টি মামলা পল্টন থানায় ও তিনটি রমনা থানায় দায়ের করা হয়৷ মামলার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷
গত ২৯ অক্টোবর দায়ের করা মামলায় কারাগারে পাঠানোর পর থেকে তিনি বন্দি রয়েছেন৷ পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা, রাস্তায় অবৈধ জমায়েত, যানবাহন ভাঙচুর, তাণ্ডব, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, সম্পদের ক্ষতি, পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত এবং দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পল্টন ও রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে মোট নয়টি মামলা করা হয়েছিল৷
মুখোমুখি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
54:44
এদিকে দৈনিক প্রথম আলোকে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেছেন, নয়টিতে জামিন পেলেও আরেকটি মামলায় আজ হাইকোর্টে তার জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে৷ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে আরো একটি মামলা৷ এ দুটি মামলায় জামিন পেলে বিএনপি মহাসচিব কারামুক্ত হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
উল্লেখ্য গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে ঢাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ মৃত্যু হয় একজন পুলিশ সদস্যের৷ এজন্য সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করে আসছে৷ তবে সহিংসতার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছেন বিএনপি নেতারা৷
এফএস/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)
২৮ অক্টোবরের পর কিছু আলোচিত ঘটনা
২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছিল৷ কিন্তু শেষ করতে পারেনি৷ এরপর ঐদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ সরকারের পক্ষে যেতে রাজি হওয়ায় জামিন পান বিএনপির এক নেতা৷ বাকিরা এখনও জেলে৷
ছবি: Kamol Das
ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলায় কারাগারে মির্জা ফখরুল
২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ সমাপ্ত হতে পারেনি৷ এর পরদিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ মির্জা ফখরুলের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, মির্জা ফখরুল ছিলেন পল্টন থানাধীন মহাসমাবেশের মূল মঞ্চে৷ রমনা থানাধীন প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভাঙচুর কিংবা ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় তিনি কোনোভাবে জড়িত নন৷
ছবি: Asif Ahasanul
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও শামসুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ, বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকসহ অনেকে৷
ছবি: Asif Ahasanul
জামিন পেয়ে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে শাহজাহান ওমর
২৮ অক্টোবরের পর গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির অন্য শীর্ষ নেতারা জামিন না পেলেও বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর ২৯ নভেম্বর জামিন পান৷ এরপর ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও পেয়েছেন৷ এই ঘটনায় বিএনপি তাকে বহিষ্কার করেছে৷
ছবি: Dulal Saha
সবকিছু দ্রুততার সাথে সম্পন্ন
শাহজাহান ওমর জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ক্ষমতাসীন দলের তাকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়৷ এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘শাহজাহান ওমরের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, সরকার কীভাবে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে৷’’
ছবি: Dulal Saha
বিএনপি, জামায়াতের যত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
২৮ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৪৭৫টি মামলায় তাদের ১৮ হাজার ৯০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি৷ আর জামায়াত বলছে, ২৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৪টি মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীর সংখ্যা দুই হাজার ৮৪৫ জন৷
ছবি: Kamol Das
গুম হওয়া ব্যক্তির কারাদণ্ড
ঢাকার বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হন বলে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে৷ সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠন গড়ে তুলেছেন৷ ২০১৩ সালের ২৫ মে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়ার মামলায় গত ২০ নভেম্বর সুমনকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
মৃত ব্যক্তিকে পালিয়ে যেতে দেখেছে পুলিশ!
গাজীপুরের আমিন উদ্দিন মোল্লা দুই বছর ১০ মাস আগে মারা যান৷ অথচ তাকে ২৮ অক্টোবর রাতে পুলিশের একটি ‘টহল দলকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়’ দেখতে পান কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন৷ মামলার এজাহার বলছে, ঘটনাটি ঘটেছিল রাতে সাড়ে ১১টার দিকে, তারগাঁও মেডিকেল মোড় এলাকায়৷ অন্ধকার রাতে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সন্দেহভাজনদের ‘স্পষ্ট’ দেখতে পেয়েছিলেন বলেও জানান সালাউদ্দিন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
উপস্থিত না থেকেও মোটরসাইকেল ভেঙেছেন!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামায়াত সমর্থক আল আমিন সরকারসহ বিএনপি-জামায়াতের ৫৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে কসবা পৌর এলাকায় ‘চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, মারধর ও দুই লাখ ছিনিয়ে নেওয়ার’ অভিযোগে মামলা হয়৷ অথচ আল আমিনের ইমিগ্রেশনের কাগজপত্রে ডেইলি স্টার দেখতে পেয়েছে, তিনি ওমরাহ পালন শেষে ৩০ অক্টোবর সকাল ৬টায় ঢাকায় নামেন৷ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ১২০ কিলোমিটার৷